আল্লামা নূর উদ্দীন ও জামেয়া গহরপুর
সুরমা নিউজ:
উপমহাদেশের খ্যাতনামা আলেম-বুজুর্গদের অন্যতম ছিলেন শায়খুল হাদিস আল্লামা নূরউদ্দীন গহরপুরী (রহ.)। ব্যক্তিত্ব ও বুজুর্গির দিক থেকে তিনি সর্বমহলে স্বীকৃত একজন আল্লাহর ওলি ছিলেন। ১৯২৪ সালের জুলাই মাসে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার গহরপুর গ্রামের মোল্লাপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত দ্বীনি পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন শ্রদ্ধেয় ও প্রসিদ্ধ দ্বীনি ব্যক্তিত্ব মাওলানা জহুরউদ্দীন (রহ.)। অতি অল্প বয়সেই তিনি পিতাকে হারান।
উপমহাদেশের খ্যাতনামা আলেম-বুজুর্গদের অন্যতম ছিলেন শায়খুল হাদিস আল্লামা নূরউদ্দীন গহরপুরী (রহ.)। ব্যক্তিত্ব ও বুজুর্গির দিক থেকে তিনি সর্বমহলে স্বীকৃত একজন আল্লাহর ওলি ছিলেন। ১৯২৪ সালের জুলাই মাসে সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার গহরপুর গ্রামের মোল্লাপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত দ্বীনি পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন শ্রদ্ধেয় ও প্রসিদ্ধ দ্বীনি ব্যক্তিত্ব মাওলানা জহুরউদ্দীন (রহ.)। অতি অল্প বয়সেই তিনি পিতাকে হারান।
গহরপুরী (রহ.) প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেন তার পিতার কাছে। পিতার ইন্তেকালের পর তার মা সিলেটের বিশিষ্ট ওলি মাওলানা বশিরউদ্দীন শায়খে বাঘা (রহ.)-এর কাছে তাকে সোপর্দ করেন। তারই তত্ত্বাবধানে তিনি বাঘা মাদ্রাসায় মাধ্যমিক পর্যায়ের লেখাপড়া সম্পন্ন করেন। এরপর বিশ্ববিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দে ভর্তি হন। ১৯৫০ সালে দারুল উলুম দেওবন্দে সর্বোচ্চ ডিগ্রি তাকমিল ফিল হাদিস পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। এরপর এক বছর শায়খুল ইসলাম মাওলানা হোসাইন আহমদ (রহ.)সহ প্রখ্যাত আলেমে দ্বীনদের অধীনে হাদিস ও ফিকাহ শাস্ত্রে বিশেষ ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৫২ সালে বরিশালের বিখ্যাত পাঙ্গাসিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় শায়খুল হাদিস পদে নিয়োগ পান। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্তির সঙ্গে সঙ্গে শায়খুল হাদিস পদে নিয়োগ লাভ ছিল এক বিরল ঘটনা। সেখানে দুই বছর অতিবাহিত করার পর ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী বালিয়া মাদ্রাসায় শায়খুল হাদিস হিসেবে প্রায় তিন বছর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৭ সালে নিজ গ্রাম গহরপুরে ‘গহরপুর হোসাইনিয়া মাদ্রাসা’ প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ মাদ্রাসার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিসের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালে সিলেটের বিশিষ্ট ওলি মাওলানা হাবীবুর রহমান রায়পুরী (রহ.)-এর কাছ থেকে আধ্যাত্মিকতায় খেলাফত লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে তার আধ্যাত্মিক শিক্ষায় বহু লোক হেদায়াতের আলোর সন্ধান লাভ করে। ১৯৬৮ সালে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের পক্ষ থেকে আয়োজিত ‘ইসলামিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব পাকিস্তান’-এর কনফারেন্সে প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
আল্লামা গহরপুরী (রহ.) ১৯৯৬ সাল থেকে আমৃত্যু বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৩টি মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা-পৃষ্ঠপোষকসহ অর্ধশতাধিক কওমি মাদ্রাসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তিনি। একজন আধ্যাত্মিক রাহবার ও বিদগ্ধ আলেমে দ্বীন হিসেবে দেশজুড়ে তিনি ব্যাপক পরিচিত ছিলেন। মাদ্রাসার নিয়মিত অধ্যাপনাসহ বিভিন্ন সভা-সমিতিতে অভিভাবকের ভূমিকা পালন করেছেন। তার বয়ান শুনতে এবং মোনাজাতে শরিক হতে মাহফিলগুলোয় দূরদূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসতেন। সারাদেশের আলেম সমাজ তাকে তাদের একজন নিঃস্বার্থ মুরবি্ব মনে করত। বাংলাদেশের আলেম-ওলামাদের একই পল্গাটফর্মে নিয়ে আসার জন্য তিনি চেষ্টা করেছেন। দ্বীনের প্রতিটি অঙ্গনে তিনি সেবা করে গেছেন। যথার্থ অর্থেই তিনি একজন নায়েবে নবীর প্রতিকৃতি ছিলেন। বৃহত্তর সিলেটসহ সারাদেশে তার অগণিত ভক্ত-মুরিদ রয়েছেন। দ্বীনের অনন্য সেবার জন্য তিনি আজও এ দেশের মানুষের কাছে স্মরণীয় হয়ে আছেন। দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ভক্তকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে আল্লামা গহরপুরী (রহ.) ২০০৫ সালের ২৬ এপ্রিল বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। কয়েক লাখ লোকের অংশগ্রহণে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। নিজ বাড়ির সামনে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
ইসলামী ঐতিহ্যের নগরী বাংলাদেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী পূণ্যভূমি সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলার গহরপুর এলাকায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরা বড়বাঘা নদীর তীরে ১৯৫৭ ইং সনে উপমহাদেশের আধ্যাত্মিক রাহবার বরেণ্য বুযুর্গ শাইখুল হাদীস আল্লামা হাফিজ নূরুদ্দীন আহমদ (গহরপুরী রহ.) সীমাহীন এখলাছ-লিল্লাহিয়াতের সহিত এলাকাবাসীর আন্তরিক সহযোগীতায় প্রতিষ্ঠা করেন ঐতিহ্যবাহী গহরপুর জামিয়া। জামিয়া ইসলামিয়া হুসাইনিয়া গহরপুর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আদর্শভিত্তিক বৃহত্তর দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।আন্তরিক সহযোগীতায় প্রতিষ্ঠা করেন ঐতিহ্যবাহী গহরপুর জামিয়া।