লজ্জাজনক ভোট ব্যবস্থায় পরিবর্তন দরকার

১০০ শতাংশের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ ভোট পাবার পর ঢাকার মেয়র নির্বাচিত হয়ে যাওয়া কতটা নৈতিক, কতটাইবা সঠিক হলো— তা কি ভেবে দেখেছি আমরা?

একবার ভাবুন তো, ১০০ ভাগের মাত্র ১৫ ভাগ ভোটার ভোট দিয়ে যদি প্রার্থীকে নির্বাচিত করেন, তাহলে অবশিষ্ট ৮৫ ভাগ ভোটার তাকে নির্বাচিত করবার পক্ষে ছিলেন না (তাদের মাত্র কয়েক শতাংশ প্রতিপক্ষের প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন) বা অন্যরা চলমান ব্যবস্থায়/প্রক্রিয়ায় সমর্থন করছেন না। এভাবে তারা ভোট থেকে বিরত থেকে, বিমুখ থেকে— নির্বাচন বা নির্বাচিত হওয়াকে ‘না’ই বলছেন।

সেখানে ৮৫ শতাংশ ভোটারের ‘মত’ বা ‘না’ বলাকে পরাজিত করে বা অস্বীকার করে মাত্র ১৫ শতাংশ ‘মত’কে বিজয়ী ঘোষণা করা কতটা সঠিক? কতটাইবা নৈতিক হলো?

হয়তো সাংবিধানিক ভাবে, হয়তো প্রাতিষ্ঠনিক ভাবে, প্রবাহমান নিয়মের কারণে নির্বাচিত হয়ে যাওয়া আইনসিদ্ধ বা সঠিক হয়ে গেছে। কিন্তু নৈতিকতার প্রশ্নে, সুস্থ্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রশ্নে এটা যথেষ্ট অনৈতিক। যথেষ্ট অবমাননার।

এরকম ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার। বিশ্বের অনেক দেশে যেখানে ভোট কাস্টিংয়ের শর্ত রাখা হয়েছে, একটি নির্দিষ্ট শতাংশ না পড়লে পুনঃনির্বাচন হয়, তাও প্রয়োজনে একাধিকবার! বিষ্ময়করভাবে আমরা সেখানে দশমিক শূন্য শূন্য ১ শতাংশ কাস্টিং হলেও নির্বাচিত হবার স্বপ্ন দেখি! বিজয় উৎসব করি!

আমাদের রাষ্ট্রচিন্তার ভেতরে লজ্জা, দেশপ্রেম, গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, ভোটারের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা থাকলে অবশ্যই এটা হতো না। এর একটা যুক্তিযুক্ত মাপকাঠি আনা দরকার।

বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে, একজন ভোটার হিসেবে চলমান ভোটপ্রথায় আমাকে বিপুলভাবে লজ্জিত করছে, চরমভাবে বিরক্ত করছে, নিদারুণভাবে রাষ্টযন্ত্র ও রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি আস্থাহীন করে তোলছে এবং আশ্চর্য রকমের ক্ষুদ্ধ করে তোলেছে! আমাদের চলমান ভোটকে ‘ভোটারের সাথে, গণতন্ত্রের সাথে ‘তামাশা’, ‘জৌলুশহীন’— ছাড়া আর কিছুই মনে হয় না।

এ থেকে অবশ্যই বেরিয়ে আসা দরকার। যত দ্রুত দেশ সেখান থেকে বেরিয়ে আসবে, ততই মঙ্গল। দেরি হলে কত ভয়াবহ, কতটুকু বড় মাশুল গোনতো হবে, তা কেবল পাকপারওয়ার দিগারই ভাল জানেন!

কিন্তু আমরা কি এ বিষয়টির প্রতি আন্তরিক? যথেষ্ট দয়াবান? যথেষ্ট বোধসম্পন্ন?

লেখক, কবি, সাংবাদিক সালমান ফরিদের ফেসবুকের স্ট্যাটাস থেকে।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/সাইফ

আরও সংবাদ