ঝড় ঘনিয়ে আসছে সৌদি রাজপরিবারে
মুখোশ পরা পুলিশ সদস্যরা শনিবার যখন তিন প্রিন্সকে গ্রেপ্তারের জন্য তাদের বাড়িতে হানা দিয়েছিল, তখন প্রাসাদে বসে হয়তো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। কারণ বাদশাহ হওয়ার পথে কাঁটা বিছিয়ে দিতে পারে এমন ব্যক্তিদের তিনি কারাগারে ছুঁড়ে ফেলতে পেরেছেন!
গ্রেপ্তার হওয়া তিন প্রিন্সের মধ্যে ছিলেন বাদশাহ সালমানের ভাই অর্থাৎ মোহাম্মদের চাচা প্রিন্স আহমেদ বিন আব্দুল আজিজ, প্রাক্তন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফ এবং তার ভাই নওয়াফ বিন নায়েফ। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ একটাই-অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিলেন তারা।
সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বহুল প্রচারিত গুজব হচ্ছে-বাদশাহ ও যুবরাজকে উৎখাতের পরিকল্পনা। এই দুজনকে উৎখাতের জন্য মরুভূমির মধ্যেও নাকি ষড়যন্ত্রকারীরা বৈঠক করেছেন। এমনকি তারা বৈদেশিক সাহায্যও চেয়েছেন বলেও দাবি করা হয়।
বিশ্লেষকদের মতে, সৌদ রাজপরিবারের প্রভাবশালী তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারে দুটি ভিন্ন ইস্যু কাজ করেছে। এর প্রথমটি হচ্ছে, যুবরাজের দৃষ্টিভঙ্গি। ক্ষমতার মসনদে যাওয়ার আগে সব বিরোধীকে সরিয়ে দেওয়া এবং বাদশাহ হওয়ার পথ মসৃন করতেই তার এই ব্যবস্থা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, রাজপরিবারের সমালোচনাকারীদের কাছে কড়া বার্তা দেওয়া-রাজপুত্রের পেছনে সবাই এক কাতারে দাঁড়াও, আর নইলে কারাগারের অন্ধকারে যাও।
এই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে ক্ষমতার দাপটেরও কিছুটা প্রকাশ দেখিয়েছেন যুবরাজ মোহাম্মদ। এদের মধ্যে আবার প্রাক্তন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে এটা সুস্পষ্ট বার্তা- যুবরাজের কোনো বিরোধীকে সহ্য করা হবে না।
বাদশাহ সালমানের ভাই আহমেদকে সম্প্রতি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে লন্ডন থেকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনকালে ইয়েমেনে সৌদি হামলার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন তিনি। দেশে ফেরার পর কথা রেখেছিলেন বাদশাহ সালমান। তবে নিরাপত্তার সঙ্গে সঙ্গে তার ওপর নজরদারিও ছিল অত্যন্ত কড়া।
২০১৫ সালে বাদশাহ সালমান ক্ষমতায় আসার পর পরবর্তী যুবরাজ বা সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে মোহাম্মদ বিন নায়েফের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। ২০১৭ সালে নায়েফকে সরিয়ে যুবরাজ বানানো হয় সালমানের ছেলে মোহাম্মদকে। এরপরই গৃহবন্দি করে রাখা হয় মোহাম্মদ বিন নায়েফকে। রাজপরিবারের উত্তরাধিকার নির্বাচন পরিষদে এই সিদ্ধান্তের বিপক্ষে ভোট দিয়েছিলেন প্রিন্স আহমেদ।
যুবরাজ হওয়ার পর সৌদি সংস্কৃতিতে আমূল পরিবর্তন এনেছেন মোহাম্মদ। নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি, সিনেমা হল চালু, পশ্চিমা সংস্কৃতি আমদানি, তেলের ওপর নির্ভরতা কমাতে যেয়ে পর্যটনখাত জোরদার ইত্যাদি। তরুণরা যুবরাজের এসব পদক্ষেপে মহাখুশি হলেও তীব্র অসন্তোষ ছড়িয়েছে রক্ষণশীলদের মাঝে। এর মধ্যে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডে নাম এসেছে যুবরাজের। ইয়েমেনে প্রায় পাঁচ বছর ধরে জড়ানো যুদ্ধ, ইরানের আঞ্চলিক প্রভাব কমাতে ব্যর্থতা, লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরিকে ডেকে এনে আটক,সর্বশেষ করোনাভাইরাস মোকাবেলার নামে ওমরাহ বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তে যুবরাজের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সংবাদমাধ্যমে বাদশাহ সালমানের অসুস্থতরা খবর প্রকাশিত হয়েছে কয়েক বার। সমালোচকদের ভাষ্য,বাদশাহর মৃত্যুর পর যাতে মসনদে উঠতে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখ পড়তে না হয় সেজন্যই আগেভাগে সব বিরোধীদের কারাগারে নিক্ষেপ করেছেন যুবরাজ। তবে বিরোধীদের দমনে যুবরাজ যত খড়গহস্ত হচ্ছেন, সৌদি রাজপরিবারে ঝড়ের পূর্বাভাস ততোটাই স্পষ্ট হচ্ছে।
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/সাইফ