আজ মহান বিজয় দিবস

আজ মহান বিজয় দিবস। ৫৩ বছর পেরিয়ে ৫৪ তে পা দিল বাংলাদেশ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লাখো শহীদের রক্তে রাঙিয়ে বাংলার দামাল ছেলেরা কেড়ে এনেছিল ফুটন্ত সকাল। আজ ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন।

বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে বীর সন্তানদের শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাসহ দেশের বিশিষ্টজন। সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হবে স্মৃতিসৌধ। নামবে সাধারণ মানুষের ঢল। আয়োজনকে কেন্দ্র করে অনেকটাই প্রস্তুত সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। রঙ-তুলির শেষ আঁচড়ে স্পষ্ট হচ্ছে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ। প্রধান ফটক থেকে বেদি পর্যন্ত সাজিয়ে তোলা হয়েছে নানা বর্ণের বর্ণিলতায়।

গেল এক মাস ধরে স্মৃতিসৌধের সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। সড়কের পাশে স্থাপন করা হয়েছে রঙিন গাছ। ছোট-বড় গাছ ও ফুলের গাছগুলো কেটেছেটে করা হয়েছে পরিপাটি।

গণপূর্ত অধিদপ্তর বলছে, বিজয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতার জন্য প্রস্তুত জাতীয় স্মৃতিসৌধ। নিরাপত্তার বিষয়টিও সর্বোচ্চ পর্যায়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানায় পুলিশ।

এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১০ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ডাকটিকিট অবমুক্ত করেছেন। একই সঙ্গে ১০ টাকা মূল্যমানের উদ্বোধনী খাম ও ৫ টাকা মূল্যমানের একটি ডাটাকার্ডও অবমুক্ত করেন তিনি।

মহান বিজয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বঙ্গভবন, দেশব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান, জনসমাবেশ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটি উদ্‌যাপিত হবে।

সার্বিকভাবে সব ধরনের ঝুঁকি পর্যালোচনা করে বিজয় দিবসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে। অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে র‌্যাবও বিজয় দিবস উপলক্ষে এর নিরাপত্তা জোরদার করেছে।

প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সবসময় বিভিন্ন ধরনের অপরাধীদের গ্রেপ্তারসহ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। অপরাধ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ধর্মীয় ও জাতীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান ও দিবসে নিরাপত্তা প্রদান এবং বিভিন্ন সেবামূলক কাজের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে র‌্যাব। দেশের যে কোনো দুর্যোগ মুহূর্তে র‌্যাব সবসময়ে বন্ধু হয়ে জনসাধারণের পাশে দাঁড়িয়েছে।

বিজয় দিবস উপলক্ষে ইতোমধ্যে জারিকৃত সব ধরনের আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক নির্দেশনা বাস্তবায়নে র‌্যাব ফোর্সেস কাজ করছে। পাশাপাশি মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে র‌্যাব কর্তৃক নিম্নে বর্ণিত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গৃহীত হয়েছে :

ক. বিজয় দিবসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১৩ ডিসেম্বর থেকে দায়িত্বপূর্ণ এলাকার উল্লেখযোগ্য ভেন্যুগুলো ও তার পাশের এলাকায় গোয়েন্দা নজরদারি এবং নিরাপত্তা টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিরাপত্তা জোরদার করতে ব্যাটালিয়নগুলোর নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক র‌্যাব সদস্য মোতায়েন থাকবে।

খ. ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর আশপাশে প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের মাধ্যমে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ইউনিফর্ম টহল বৃদ্ধি করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়াও র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইন নজরদারির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

গ. র‌্যাবের টহল জোরদার করার পাশাপাশি দেশব্যাপী বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ডগ স্কোয়াড ও র‌্যাব বোম্ব স্কোয়াড দ্বারা সুইপিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। সম্ভাব্য যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় র‌্যাবের স্পেশাল ফোর্স প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ঘ. সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বঙ্গভবন ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনসহ সারা দেশে মহান বিজয় দিবস-২০২৪ উদ্‌যাপন উপলক্ষে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণকল্পে র‌্যাবের দৃশ্যমান উপস্থিতি ও টহল অব্যাহত রাখতে হবে।

ঙ. অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশে কেউ যেন কোনো ধরনের ব্যাগ, বস্তা বা কার্টন জাতীয় কোনো দ্রব্য বহন ও সংরক্ষণ না করতে পারে। সন্দেহভাজন ব্যক্তি অথবা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে বিশেষ গোয়েন্দা তৎপরতা ও অভিযান পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি কিশোর গ্যাং সংক্রান্তে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধিকরণ এবং এরা যাতে সংঘাতে লিপ্ত হয়ে অনুষ্ঠান পণ্ড করতে না পারে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

চ. ঢাকা মহানগরীতে বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে দেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকবেন। এসব ভেন্যু/অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে।

ছ. সারা দেশে ভিভিআইপি/ভিআইপি, বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের গমনাগমনের স্থানসহ জনসমাগম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এমন স্থানে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

জ. শহরের প্রবেশ/বাহির পথগুলোসহ, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপনপূর্বক তল্লাশি পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা যেখানে জনসমাগম বেশি হয় সেসব এলাকাগুলোয় যাতে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সৃষ্টি না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

ঝ. সন্ত্রাসী/অপরাধীরা যাতে বস্তি/হোটেল/রেস্ট হাউসে অবস্থান করে অপরাধ পরিকল্পনা করতে না পারে এ লক্ষ্যে নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকার সব বস্তি, হোটেল, গেস্ট/রেস্ট হাউস, নগরীর উপকণ্ঠে নতুনভাবে গড়ে ওঠা আবাসিক এলাকাগুলো ও ক্রাইম জোনগুলোয় নজরদারি করা হবে।

ঞ. র‌্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড টিমকে কৌশলগত স্থানে সার্বক্ষণিকভাবে নিরাপত্তার কাজে নিয়োগ করা হয়েছে।

ট. যে কোনো ধরনের নাশকতামূলক, বোমাবাজিসহ সহিংস ঘটনা রোধকল্পে আগাম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহপূর্বক প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও নিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

ঠ. মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আসা কোনো নারী যাতে ইভটিজিং, যৌন হয়রানি অথবা সম্মানহানির শিকার না হন সেদিকে বিশেষভাবে সতর্ক দৃষ্টি রেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

ড. দেশের বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন এবং লঞ্চ টার্মিনাল ও এর আশপাশের এলাকায় সাদা পোশাক ও ইউনিফর্মে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

ঢ. ব্যাটলিয়নগুলো নিজ নিজ কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে তাদের জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করবে। র‌্যাব সদর দপ্তরে কন্ট্রোল রুমের (কন্ট্রোল রুমের হটলাইন নাম্বার : ০১৭৭৭-৭২০০২৯) মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ ও সমন্বয় করা হবে।

আরও সংবাদ