রাজনগরে দুগ্ধ খামারগুলো এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম!


চলমান কঠোর লকডাউনে ক্রেতা সংকটে বিপাকে পড়েছেন মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার ১১৫ দুগ্ধ খামারি। ধারাবাহিক লোকসানের কারণে তাদের খামারগুলো এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম। দুধ বিক্রি করে গাভীর খাবারও যোগান হচ্ছে না তাদের। ফলে গাভী ও খামার নিয়ে চরম হতাশা ও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন উপজেলার খামারীরা।

খামারীরা জানান, উৎপাদিত দুধের বড় একটি অংশ ফুলকলি ব্রেড এন্ড বিস্কুট ফেক্টরী কিনে নেয়। আবার উপজেলার বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেন্ট, মিষ্টি ও চায়ের দোকানসহ বাসা-বাড়িতেও দুধ সরবরাহ করা হয়। অবশিষ্ট দুধ খোলা বাজারে বিক্রি করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগ বন্ধ থাকায় বিপুল পরিমাণের দুধ রয়ে যাচ্ছে অবিক্রিত। আবার দীর্ঘক্ষণ সংরক্ষণ করার সুযোগ না থাকায় অনেক দুধ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ফেলে দিতে হয়।

এদিকে লকডাউনের শুরুর দিকে ফুলকলি কর্তৃপক্ষ দুধ নেয়া বন্ধ করে দেয়ায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েন এসব খামারীরা। তাদের অনুরোধে ঈদের কয়েকদিন আগে থেকে কর্তৃপক্ষ শুধু সকাল বেলার দুধ কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। দুধ বিক্রি করতে না পারায় গাভীর খাবার ও অন্যান্য খরচ বাবদ যা ব্যয় হয় তা-ই তুলতে পারছেন না খামারীরা।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ছোট-বড় মিলে ১১৫টি দুগ্ধ উৎপাদনযোগ্য খামারে প্রায় ১৭ হাজার গাভী রয়েছে। এসব খামার থেকে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ হাজার ৯’শ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। এ ছাড়া হিসেবের বাইরেও গ্রামীণ পর্যায়ে অসংখ্য কৃষক রয়েছেন যারা একটি করে গাভী পালন করছেন। সেখান থেকেও প্রচুর দুধ উৎপাদন হচ্ছে।

উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের সৈয়দনগর ডেইরি ফার্মের মালিক মো. লিয়াকত মিয়া জানান, তার ব্যক্তিগত ও যৌথ উদ্যোগে ২টি খামার রয়েছে। এসব খামার থেকে প্রতিদিন ২’শ লিটার দুধ পাওয়া যায়। যেসব মিষ্টির দোকানে তিনি দুধ বিক্রি করতেন লকডাউনে দোকানগুলো বন্ধ আছে। ফুলকলির গাড়ি আগে সব দুধ নিয়ে গেলেও এখন মাত্র ৬০ লিটার দুধ নিচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়েও তেমন চাহিদা না থাকায় নামমাত্র মূল্যে দুধ বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে খরচের টাকা উঠাতে পারছেন না তারা। সরকার থেকে যে সহযোগিতা পেয়েছেন তাতে ৩০টি গাভীর তিনদিনের খাবারেই চলে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে তার গাভী বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

সদর ইউনিয়নের খারপাড়া গ্রামের হেলাল আহমদ বলেন, বাজারে গো-খাদ্যের দামও অনেক বেড়ে গেছে। অথচ বাজারে দুধ বিক্রি করা যাচ্ছে না। আমরা দুধ ও গাভী নিয়ে খুবই বিপাকে আছি। এভাবে চলতে থাকলে আমরা পথে বসে যাবো।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নিবাস চন্দ্র পাল বলেন, লকডাউনের কারণে হোটেল ও মিষ্টির দোকানগুলো হঠাৎ করে বন্ধ করে দেওয়ায় খামারিরা দুধ নিয়ে বিপাকে পরেছেন। রমজান মাসে খামারিদের দুধ বিক্রি করার জন্য আমাদের খরচে ভ্রাম্যমাণ পরিবহনের ব্যবস্থা করেছিলাম। এখন তাদেরকে পরামর্শ দিয়েছি ‘মিল্কব্যাংক’ হিসেবে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় চালু করতে। প্রয়োজনে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করব।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান

আরও সংবাদ