করোনাভাইরাস; বিশ্বব্যাপী বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল
মৃত্যুর দূত হয়ে একের পর এক বিশ্বের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ছে করোনা ভাইরাস। এ তালিকায় নতুন করে যুক্ত হয়েছে আইরিশদের (আয়ারল্যান্ড) নাম।
এতে প্রতিনিয়ত আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি থেমে নেই মৃত্যুর মিছিল। ভাইরাসটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে উৎপত্তিস্থল চীনসহ ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
যাদের অধিকাংশই চীনা নাগরিক। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আফ্রিকার দেশগেুলো। যেখানে ইরানের একজন এমপিও রয়েছেন। এখন পর্যন্ত করোনায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের ১০৯ জনসহ ২ হাজার ৯৭৯ জনের প্রাণ গেছে।
অপরদিকে, চীনে সুস্থ হওয়ার হার বাড়লেও বিশ্বজুড়ে কমছে না প্রকোপ। হাজার চেষ্টা করে কোথাও কোথাও নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলেও আক্রান্ত হচ্ছেই। বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও ইরানে আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও ৬টি দেশ। নিউজিল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, বেলারুশ, লিথুয়ানিয়া, আয়ারল্যান্ড ও আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া।
গত ডিসেম্বরে শুরু হওয়া মরণঘাতি এ ভাইরাসটিতে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে দেড় হাজার নাগরিক আক্রান্ত হয়েছেন। রোববার সকাল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৮৬ হাজার ৫২৯ জনে দাঁড়িয়েছে। এটি কেবল দেশগুলোর দেয়া সরকারি তথ্যমতে। প্রকৃত অবস্থা আরও ভয়াবহ।
আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন আরও সাড়ে ৩ হাজার মানুষ। এ নিয়ে গত ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ ভাইরাসে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছাড়ার সংখ্যা প্রায় ৪২ হাজার।
আজ রোববার চীনা সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে।
মহামারি আকার ধারণ করা ভাইরাসটিতে চীনের বাহিরে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে ইসলামী প্রজাতন্ত্রের দেশ ইরানে। দেশটিতে রোববার সকাল পর্যন্ত আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় মারা গেলেন ৪৩ জন। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ছয়শ জনে। যেখানে দেশটির একজন সংসদ সদস্যও রয়েছেন।
এদিকে ইরানের মতোই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ইতালিতে। দেশটিতে গতকাল এক লাফে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ২৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১১২৮।
নিহতের সংখ্যায় কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও চীনের বাহিরে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটিতে এখন পর্যন্ত ১৭ জন মারা গেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২শ জনের দেহে করোনা সনাক্ত করেছে দেশটির চিকিৎসা বিভাগ। এ নিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১৫০ জনে।
জাপানি প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসে প্রাণ হারিয়েছেন ৬ জন। গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ওই প্রমোদতরীর যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৭০৫ জন।
আর প্রথমবারের মত যুক্তরাষ্ট্রে গতকাল শনিবার মারা গেছেন একজন। এছাড়াও, জাপানে-৫, হংকংয়ে-২, ফ্রান্সে-২, তাইওয়ানে-১, জার্মানিতে-২ ও ফিলিপাইনে একজন মারা গেছেন।
তবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনা সন্ধান মিলেনি। সিঙ্গাপুরে করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে দুই বাংলাদেশি সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছেন। বাকিদের অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।
এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে ‘করোনা ভাইরাসকে‘সর্বোচ্চ ঝুঁকি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সংস্থাটির ঝুঁকি নির্ণয়ে এটি সর্বোচ্চ ধাপ। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ড. টেড্রস অ্যাডহানম গেব্রেইয়েসুস এই ঘোষণা দেন বলে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ড. টেড্রস অ্যাডহানম বলেন , ‘এই জিনিসটি (করোনাভাইরাস) এখন যেকোনো দিকে মোড় নিতে পারে। এর যে ঝুঁকি সেটাকে আমরা দুর্বল করে দিতে পারছি না। এজন্য আজ আমরা বলছি, করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক ঝুঁকি এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। আগে আমরা বলেছি, উচ্চ ঝুঁকি। এখন বলছি সর্বোচ্চ ঝুঁকি।’
তিনি আরও বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ভাইরাস চিহ্নিত করা যাচ্ছে এখনও। তবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষের মধ্যে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার প্রমাণ মেলেনি।’
এদিকে, বিশ্বব্যাপী আতঙ্ক ছড়ানো করোনা ভাইরাসটি যাতে ছড়িয়ে না পড়ে সে ভয়ে ওমরাহ যাত্রী ও মসজিদে নববী ভ্রমণ সাময়িক স্থগিত করেছে সৌদি আরব। গত বৃহস্পতিবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।
গত ৩১ ডিসেম্বর হুবেই প্রদেশের উহান শহরেই প্রথম এই ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। এখন পর্যন্ত এটি বিশ্বের অন্তত ৪৬টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। চীনের হুবেই প্রদেশের উহানের একটি সামুদ্রিক খাবারের বাজার থেকে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু। অনেক দেশই তাদের নাগরিকদের চীন ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
এ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায়, বেলজিয়াম, কম্বোডিয়া, কানাডা, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, হংকং, ভারত, ইতালি, জাপান, ম্যাকাও, মালয়েশিয়া, নেপাল, রাশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, শ্রীলঙ্কা, সুইডেন, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইরান এবং ভিয়েতনামে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘কোভিড-১৯ দিনে দিনে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠছে। মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। কিছু রোগীর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, তাদের মাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়ছে।’ এই রোগের কোনো প্রতিষেধক এবং ভ্যাকসিন নেই। মৃতদের অধিকাংশই বয়স্ক যাদের আগে থেকেই শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত জটিলতা ছিল।
এশিয়াবিডি/মুবিন/কামরান