‘কালিমা’
কলি, গ্রামের দুরন্ত কিশোরী,পাঁচ ক্লাস শেষ করে ছয় ক্লাসে উঠেছে।যৌবনের উঁকিঝুঁকি দেহপানে ছোঁয়া লাগালেও কিশোরী মন যৌবনের ধারে কাছেও ঘেঁষে নি। সৎ মায়ের সংসারের নানা নির্যাতন ও অবহেলা তার দুরন্তপনার লাঘাম টানতে পারে নি একটুও। দুরন্ত এই মেয়েটির হঠাৎ অস্বাভাবিক শান্ত হয়ে যাওয়ার গল্পটিই আজ আপনাদের শোনাব…
হবিরুল ইসলাম, চল্লিশোর্ধ মধ্য বয়স্ক স্কুল শিক্ষক।যিনি বাড়িতে একাই থাকেন। কারণ তার স্ত্রী অন্য একটি জেলায় প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষিকা আর একমাত্র ছেলে ঢাকায় থেকে পড়াশোনা করে।খুব অল্প টাকায় পড়াত বলে কলির সাথের সব ছেলে মেয়ে দলবেঁধে হবিরুল মাস্টারের কাছে পড়ত।তবে অতি ধার্মিক ও নীতিবান মাস্টার সাহেব ছেলেমেয়েদের মধ্যে যেন প্রেমের সম্পর্ক গড়ে না ওঠে তাই ছেলে ও মেয়েদের একসাথে না পড়িয়ে আলাদা পড়াত।আর মেয়েদের মধ্যে কলিকে তিনি সবচেয়ে বেশি আদর করতেন।সবসময় “মা” কলি বলে ডাকতেন।বর্ষার এক বিকেলে কলিরা পড়তে গেল হবিরুল মাস্টারের বাড়িতে।ছুটির ঠিক আগ মুহূর্তে হবিরুল মাস্টার কলিকে বলল, “মা কলি আমাকে এক কাপ চা বানিয়ে দে তো মা।” কলি চা বানাতে রান্না ঘরে গেল।এই ফাঁকে সবার ছুটি হয়ে গেল আর আসন্ন বৃষ্টির আশঙ্কায় সবাই চলেও গেল।চা বানিয়ে কলি হবিরুল মাস্টারের শোয়ার ঘরে নিয়ে এলো।ইতিমধ্যেই দুনিয়া অন্ধকার করে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হল। হবিরুল মাস্টার কলিকে বলল,“কাছে এসে বস মা বৃষ্টি থামলে আমি তোকে পৌঁছে দেব।” কলি চায়ের কাপটা খাটের সাথে লাগোয়া টেবিলে রেখে তার শ্রদ্ধেয় ধার্মিক স্যারের পাশে এসে বসল।ইতিমধ্যেই হবিরুল মাস্টারের চোখ দুটো পড়ল কলির সদ্য প্রস্ফুটিত বুকের উঁচু দুটো মাংস পিণ্ডের উপর।তার ভেতর একটি কামাতুর সাপ ফোঁসফোঁস করে ফনা তুলে উঠল।অবাক বিস্ময়ে কলি তাকিয়ে দেখল যে তার বাপের বয়সী স্যার হঠাৎ করেই তার সদ্য গজে ওঠা তুলতুলে নরম দুটি বুক নিয়ে খেলতে শুরু করল।ঘটনার আকস্মিকতায় কিংকর্তব্যবিমুঢ় কলি জানতে চাইল,“স্যার এসব কি করছেন?” হবিরুল মাস্টার বলল, “মারে এইটা একটা খেলা,খুব মজার খেলা।আমি যা করতে চাই তা করতে দে কোন বাধা দিস না।দেখবি খুব মজা পাবি।” কলি এই খেলা খেলতে রাজি কিনা কিংবা এই খেলা খেলতে প্রস্তুত কিনা এসব কিছুর তোয়াক্কা না করেই তাকে বস্ত্রানাবৃত করল হবিরুল মাস্টার।কলি কোন কিছু বুঝার আগেই হবিরুল মাস্টারের কালো কুচকুচে ফনা তোলা সাপ এফোঁড় ওফোঁড় করে দিল কলিকে।আর কলিও বুঝতে পারল এই মজার খেলার ভয়াবহতা কতটা যন্ত্রনাদায়ক। তার গগনবিদারি চিৎকার বৃষ্টির কান্নার শব্দের সাথে মিশে গেল,কারও কানে প্রবেশ করল না।ফনা তোলা সাপটি নিস্তেজ হওয়ার আগেই নেতিয়ে পড়ল কলি অর্থাৎ জ্ঞান হারাল সে। জ্ঞান ফেরার পর সে দেখল হবিরুল মাস্টার তার মাথায় পানি ঢালছে, তার রক্তে বিছানার চাদরের মাঝখানটা ভিজে গেছে, নিম্নাঙ্গে ভয়ংকর ব্যথা। সে দেখতে পেল তার বানানো আগুন গরম চা ঠাণ্ডা হয়ে স্থির বসে আছে, প্রকৃতিও বৃষ্টিধারায় স্নান করে স্নিগ্ধতার আবেশ ছড়াচ্ছে শুধু তার ভেতরতাই কেবল আগ্নেওগিরির মত জ্বলছে…….।
সন্ধ্যার পর হবিরুল মাস্টার নিজেই কলিকে তার বাড়ি পৌঁছে দিল আর তার বাবাকে বলল,“মেয়ে তো দেখি ছাতা নিয়ে যায় নাই তাই আমি নিজেই নিয়ে এলাম।আসার পথে পা পিছলে পড়ে গেছে তাই একটু ব্যথা পেয়েছে হাঁটতে কষ্ট হয়,পায়ে একটু মলম লাগিয়ে মালিশ করে দিও”।তার বাবা মা পায়ে মলম দেয়া তো দূরের কথা তার অতি অস্বাভাবিক হাঁটা দেখেও জানতে চায়নি আসল ঘটনা আসলে কি!কলি যেন একদিনেই অনেক বড় হয়ে গেল।দুরন্তপনার ধারেকাছে তো আর কখনোই যায়নি বরং স্বাভাবিক কথা বলাও অনেকটা কমে গেছে, স্কুলে যাওয়াও বন্ধ করে দিল।কিন্তু তার এই পরিবর্তনগুলো বাবা মায়ের নজরে এলো না কারণ তাকে নিয়ে ভাবার সময় তাদের ছিল না।বরং সারাদিন ঘরে থাকতো বলে সৎ মায়ের নির্যাতনটা বেড়ে গিয়েছিল বেশ কয়েকগুন।
একদিকে সৎ মায়ের নির্যাতন অন্য দিকে দুঃসহ স্মৃতির যন্ত্রণা ভুলতে কলি পা বাড়াল শহরপানে যেন গার্মেন্টসে কাজ করে হলেও দুমুঠো ডাল ভাত যোগাড় করতে পারে। কিন্তু শহর জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুরুষ মানুষের লোলুপ দৃষ্টি এড়াতে পারেনি তার যৌবন ভরা দেহ।নানা পুরুষের হাত বদল হওয়া কলি ২৮ বছর বয়সে তার সৌন্দর্যের কারণেই হোক বা পুরুষ মানুষের শয্যাসঙ্গী হওয়ার সুবাধেই হোক নাটকে অভিনয় ও মডেলিং করার সুযোগ পেল।মডেল হওয়ার পর তার সাথে পরিচয় হল বহুজাতিক কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সজিবের সাথে।এই কোম্পানির পণ্যের মডেল হিসেবে ইতিমধ্যেই একটি বিজ্ঞাপনও করে ফেলেছিল কলি।পরিচয় থেকে প্রণয়,প্রণয় থেকে পরিণয়ে সম্পর্ক গড়াতে বেশি দিন লাগে নি তাদের। সজিবের মা নেই, বৃদ্ধ বাবা গ্রামে থাকে তাই ফোনে বাবার অনুমতি নিয়ে ঢাকাতেই এক কাজী অফিসে বিয়ের কাজটি সারল তারা।
বিয়ের তিনমাস পর শ্বশুরের অসুস্ততার খবর পেয়ে সজিবের সাথে শ্বশুর বাড়ি পানে ছুটল কলি। গ্রামে পৌঁছার পরই সে বুঝতে পারল এই গ্রামই হল তার শৈশব কাটানো সেই গ্রাম।প্রেমের নেশায় মত্ত কলি কখনই জানতে চায়নি সজিবের গ্রাম কোথায়,আর সজীবও এসব ব্যাপারে কোন আগ্রহ দেখায় নি।শ্বশুরালয়ে ঢুকে যখন বিছানায় শুয়ে থাকা কঙ্কালসার মানুষটার মাঝে তার শৈশবে কুমারিত্ব হরণকারী হবিরুল মাস্টারের প্রতিচ্ছবি খুঁজে পেল।যখন জানল যে সেই নরপশুই তার শ্বশুর তখন ঘৃণায় ও ক্ষোভে তার অন্তর জ্বলে উঠল। কিন্তু স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে শয্যাশায়ী হবিরুল মাস্টারকে পা ছুঁয়ে সালাম করল সে।ব্যস্ততার কারণে পরের দিনই ঢাকায় ফিরল সজিব।কিছুদিন বাবার দেখাশোনার জন্য কলিকে রেখে গেল গ্রামে। কিছুতেই নিজের মনকে শান্ত করতে পারছিল না কলি এর মধ্যে একদিন হঠাৎ করেই দুনিয়া অন্ধকার করে পুরনো সেই বৃষ্টি শুরু হল মুষলধারে আর তখনই কলির ভেতরকার ক্ষতটিতে রক্তক্ষরণ শুরু হল নতুন করে।ধীর পায়ে শ্বশুরের শোয়ার ঘরে প্রবেশ করল কলি।জীর্ণকায় হবিরুল মাস্টারের পাশে বসে আচমকা তার কুচকে থাকা অসাড় পুরুষাঙ্গটি ধরে বলল,“বাবা চলুন না আজও সেই খেলাটি খেলি,আপনি যা বলবেন আমি তাই করব বাবা একটুও নড়াচড়া করব না,আকাশ কাঁপিয়ে চিৎকারও দেব না।অনেক পুরুষের সাথে খেলতে খেলতে আমিও পাকা খেলোয়াড় হয়ে গেছি বাবা। আজ আমরা দুজনেই মজা পাব। আসুন না খেলি বাবা”।লজ্জা,অনুশোচনা ও অপমানে অন্য দিকে চোখ ঘুরিয়ে ফেলল হবিরুল মাস্টার।চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল অনুশোচনার জল।কিন্তু সেই জল কলিকে শান্ত করল না একটুও বরং তার ভেতর ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরিকে জ্বালিয়ে দিল শতগুণে। এক দলা থুথু মেঝেতে ফেলে দৌড়ে বের হয়ে গেল কলি।
গা রিনরিন করা থুথুর দিকে অপলক তাকিয়ে থুথুর মধ্যেই নিজেকে খুঁজে পাচ্ছিল হবিরুল মাস্টার আর তার কৃতকর্মের জন্য বারবার দগ্ধ হচ্ছিল বিবেকের দংশনে।আর কলি বৃষ্টিধারায় সিক্ত হয়ে তার ভেতর সভ্য জগতের অসভ্য পুরুষের ঠেসে দেয়া কীট গুলো হতে মুক্ত হতে চাইছিল প্রাণপণে।পাগলের মত উঠানের এপাশ থেকে ওপাশে ছুটছিল যেন এ ছুটে চলা অনন্তকাল চলতেই থাকবে। যতদিন না পর্যন্ত এই কলঙ্কের কালিমা না মুছে…।
লেখকঃ বিমানবন্দর, ঢাকা থেকে
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান