ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ ও আমাদের করণীয়
ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম। ইসলামের আবির্ভাব হয়েছে ফিতনা- ফাসাদ ও অজ্ঞতা দূর করে মানব কল্যাণ ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার জন্য। কেননা ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা মানুষকে প্রকৃত মনুষত্ব শিক্ষা দেয়। আর ইসলাম কখনো সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না। তাই প্রথমে আমাদের কয়েকটি বিষয় জানতে হবে “জঙ্গী” শব্দের অর্থ কি এবং জঙ্গিবাদ কাকে বলে এবং এই শব্দটি কখন থেকে সন্ত্রাসবাদ অর্থে ব্যবহৃত হওয়া শুরু হয় এবং তাকে ইসলামের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়। “জঙ্গ” শব্দটি উর্দু ও ফার্সি ভাষার সাহিত্যপূর্ণ একটি শব্দ যার অর্থ যুদ্ধ লড়াই । আর এই শব্দটি ধর্মীয় স্বাধীনতাকামী সর্বপ্রকার যুদ্ধের জন্য ব্যবহৃত হতো। কিন্তু বর্তমানে “জঙ্গী” শব্দটি শুধুমাত্র সন্ত্রাস বা সন্ত্রাসবাদ বুঝানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
আমরা এখন জানবো কখন থেকে ইসলাম ও মুসলমানদের উপর এই সন্ত্রাসবাদের কলঙ্ক লেপন করা হয়। আমরা জানি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে রোম-পারস্য নামক দুটিপরাশক্তি রাজত্ব করত। যারা মুসলমানদের হাতে পরাজিত হয়ে ধুলোয় মিশে যায় যার ইতিহাস আমাদের সকলেরই জানা। ঠিক তেমনি ভাবে আমাদের এই সময়ে ৯০ দশকের পূর্বে রাশিয়া ও আমেরিকা নামক দুই পরাশক্তির রাজত্ব ছিল। কিন্তু রাশিয়া যখন আফগানিস্তানের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয় এবং তাদের রাজত্ব ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় তখন ও আফগানিস্তানের যোদ্ধাদের স্বাধীনতাকামী যোদ্ধা বলা হত। কিন্তু আমেরিকা যখন রাশিয়ার পতন দেখলো তখন তাদের অন্তরে ভয় ধরে যায়। কেননা তারা জানে যখন কোন একটা জাতির পতন হয় তখন আরেকটি জাতির উত্থান হয় ঠিক তেমনি ভাবে যখন একটি পরাশক্তির পতন হয় তখন আরেকটি পরাশক্তির উত্থান হয়। তাই আমেরিকা তাদের গবেষকদের গবেষণা দ্বারা জানতে পারলো যে, মুসলমানদের যেভাবে উত্থান হচ্ছে এর দ্বারা বুঝা যায় অদূর ভবিষ্যতে আমেরিকার বিপরীত পরাশক্তি হিসেবে মুসলমানরা রাজত্ব করবে। আরে কথা আমেরিকা মেনে নিতে পারলোনা ।
কেননা কে বা চায় তার রাজত্ব হাতছাড়া করতে। তাই তারা একক রাজত্ব করার লক্ষ্যে সেই সময় থেকে মুসলমানদের উপর জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদের কলংক লেপন করে সর্বপ্রকার চাপ সৃষ্টি করে মুসলমানদেরকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। যাতে করে মুসলমানরা শক্তি অর্জন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। আর কিছুদিন আগে সে পরাশক্তি আমেরিকা ও আফগানিস্তানের হাতে নাকানি চুবানি খেয়ে চুক্তিবদ্ধ হতে বাধ্য হয়েছে।এবং আবারও আফগানিস্তানের যোদ্ধাদের স্বাধীনতাকামী যোদ্ধা বলতে শুরু করেছে। তারা শান্তির ধর্ম ইসলামকে কলঙ্ক লেপন করে কলুষিত করতে চেয়েছিল।অথচ আমরা জানি ইসলাম হলো শান্তির ধর্ম যা কোন ফিতনা-ফাসাদ সুদ ঘুষ রাহাজানি সহ কোনো ধরনের সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না।বরং যারা ফিতনা-ফাসাদের মাধ্যমে দুনিয়াতে অশান্তি অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায় তাদের জন্য মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআনুল কারিমে কঠিন ধমকি ও শাস্তির বার্তা রয়েছে। কেননা মহান রব্বুল আলামীন ইরশাদ ফরমান
والفتنة اشد من القتل
“ফিতনা ফাসাদ সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ”(আল বাকারা-১৯১)
অন্য আয়াতে আল্লাহপাক বলেন من اجل ذلك كتبنا على بني اسرائيل انه من قتل نفسا بغير نفس او فساد في الارض فكانما قتل الناس جميعا
“যে কেউ কোন ব্যক্তি কে হত্যা করলো অন্য কাউকে হত্যা অথবা জমিনে বিপর্যয় সৃষ্টি করার অপরাধ ছাড়া সে যেন সকল মানুষকে হত্যা করল”(আল মায়েদা-৩২)
আর অপরদিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন المسلم من سلم المسلمون من لسانه ويده.
“প্রকৃত মুসলমান ঐ ব্যক্তি যার হাত ও মুখ হইতে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে।” এ সকল আয়াত ও হাদিসের মাধ্যমে বুঝে আসে ইসলাম শান্তি ও সম্পৃতির ধর্ম। ইসলামের আবির্ভাব হয়েছে সর্বপ্রকার অরাজকতা ও সহিংসতা কে দূর করে সমাজে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য। আর যে ধর্মের ধর্মগ্রন্থে এমন মহাবাণী রয়েছে তা কিভাবে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদকে সমর্থন করতে পারে? অতএব যারা ইসলাম নাম বিক্রি করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে তারা ইসলাম ও প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শবহির্ভূত কাজ করছে। কেননা তাদের উদ্দেশ্য হলো সমাজ ও রাষ্ট্রকে আতঙ্কগ্রস্ত করে পার্থিব সম্পদ অর্জন, ক্ষমতা দখল ও আধিপত্য বিস্তার করা। আর তা ইসলামের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। কেননা ইসলামে জিহাদকে ফরজ করা হয়েছে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে জুলুম-নির্যাতন ও ফিতনা ফাসাদ দূর করে একটি সুস্থ ও শান্তিময় সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য। তাই জিহাদ ও জঙ্গিবাদ কখনো এক হতে পারেনা। যা আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হুদায়বিয়ার সন্ধি ও মক্কা বিজয় সহ অন্যান্য জিহাদের পরবর্তী কার্যক্রম দ্বারা বুঝতে পারি । যা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ রয়েছে। ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনা স্থান পাওয়া সত্ত্বেও যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুদ্ধবাজ ও সন্ত্রাসবাদের কলংক লেপন করতে চায় তারা নিঃসন্দেহে জ্ঞানপাপী এবং তারাই হয়তো জঙ্গিবাদী।
আর এই সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ কে প্রতিহত করতে হলে আমাদের করনীয় হলো:
মানুষদের এ কথা বুঝানো যে জিহাদ ও সন্ত্রাসবাদ এক নয়। ইসলামে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোন স্থান নেই একথা মানুষের নিকট বেশি করে প্রচার করা। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে ধর্মান্ধতা ও ধর্মের অপব্যাখ্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে ইসলামী শিক্ষার ব্যাপক প্রচার ও প্রসার করা। তাই পরিশেষে বলব যারা ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদ করে ইসলামকে কলুষিত করতে চায় তারা যেন জেনে রাখে ইসলাম এমন এক প্রদীপ যা প্রজ্বলিত হয়েছে সত্যের আলো ছড়ানোর জন্য নিভে যাওয়ার জন্য নয় তাকে যত বেশি চাপা দেওয়া হবে তা ততবেশি প্রজ্বলিত হবে।
তাই আসুন!!! জিহাদ ও জঙ্গিবাদ এর পার্থক্য জেনে জনসাধারণকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার করি এবং গণ আন্দোলন গড়ে তুলি। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন!!!!
লেখকঃ
দারুল হাদীস (এম.এ, ইসলামিক স্টাডিস)
জামিয়া ইসলামিয়া ইসলামবাগ, চকবাজার, ঢাকা।
এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান