৩ বছরেও মেলেনি মনু নদীর বাঁধ মেরামতের অনুমতি
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় প্রায় তিন বছরেও মেরামত সম্পন্ন হয়নি মনু নদীর বাঁধ। ভারত সরকারের নানা অজুহাত ও বিএসএফের বাধার মুখে প্রতিরক্ষা বাঁধটির বাংলাদেশ অংশে কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর সীমান্তে ১ হাজার ৪০০ মিটার এলাকায় ভাঙন তীব্র হয়েছে। কয়েক হাজার মানুষ বর্ষায় বন্যাতঙ্কে রয়েছে। চাতলা ইমিগ্রেশন চেকপোস্টটিও হুমকির মুখে পড়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, যৌথ নদী কমিশন মনু নদীর বাঁধ মেরামত ও তীর সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে।
মনু নদীর কারণে বন্যা আর নদীর ভাঙন থেকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলাকে রক্ষার জন্য স্থায়ীভাবে নদীর তীর সংরক্ষণ ও বাঁধ মেরামতের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ২০২১ সালে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নদীর বাঁধ মেরামত ও তীর সংরক্ষণের কাজ শুরু করলেও ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এতে বাধা দেয়। তাদের বাধায় তিন বছর ধরে কাজ বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মৌলভীবাজার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর সীমান্তের মনু নদী প্রতিরক্ষা বাঁধের তিনটি পয়েন্টে ১ হাজার ৪০০ মিটার এলাকায় ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। শরীফপুর ইউনিয়নের বাঁধের এ অংশ অনেক আগেই নদীর সঙ্গে মিশে একাকার হয়ে গেছে। বর্ষায় নদীতে পানি বাড়লে কোনটি প্রতিরক্ষা বাঁধ, কোনটি নদী, আর কোনটি গ্রাম তা বোঝার উপায় থাকে না।
সীমান্তবর্তী এ ইউনিয়নের মানুষ এখন বন্যাতঙ্কে রয়েছে। ২০১৮ সালের বন্যায় পুরো এ ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ ঘরবাড়ি হারিয়ে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ওই সময় চাতলাপুর ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট এলাকার রাস্তাঘাট, সেতু ও কালভার্ট বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
বাঁধ মেরামতের কাজের কথা ভারতকে জানানো হলেও দীর্ঘদিন সাড়া মেলেনি। ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে যৌথ নদী কমিশনের কাছে এ কাজের অনুমতি চেয়ে ডিও চিঠি পাঠানো হয়। তাতেও ভারতপক্ষের সাড়া পাওয়া যায়নি। চলতি বছরের মার্চে ভারত তাদের পাঁচটি স্থানে নতুন করে নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশের সম্মতি চায়। এ স্থানগুলো তাদের অংশে পড়েছে বলে ভারতীয় পক্ষ দাবি করেছে। এতে কুলাউড়া উপজেলার শরীফপুর ইউনিয়ন সীমান্তের নদীভাঙন প্রতিরোধ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয় লোকজনের বক্তব্য, বর্ষার আগেই নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামতের কাজ শেষ করতে হবে। না হলে বন্যার আতঙ্কে থাকতে হবে।
পাউবোর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাবেদ ইকবাল বলেন, গত ১ এপ্রিল পাউবো তত্ত্বাবধায়কের নেতৃত্বে একটি টিম সীমান্ত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে। সে সময় ভারত সরকারের দাবি করা পাঁচটি স্থান বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায় না থাকায় এ ব্যাপারে সঠিক কোনোকিছু জানা যায়নি।
তিনি আরও বলেন, গত বছর যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে কাজ শুরু করার জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু এ ব্যাপারে অন্যপক্ষের সাড়া পাওয়া যায়নি। এরপর আরও কয়েকবার আবেদন করা হয়। সম্প্রতি যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে মনু নদীর ভারত অংশে ভাঙনের ৫টি স্থানে বাংলাদেশের অনুমিত চাওয়া হয়েছে। ওই স্থানগুলো দেখার জন্য থেকে পাউবোর পক্ষ থেকে বিজিবির মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করা হয়েছে। বিএসএফ স্থানগুলো দেখার অনুমতি দিলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।