জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী মানুষ হুমকির মুখে
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বব্যাপী মানুষ হুমকির মুখে। জলবায়ু পরিবর্তনকে জলবায়ুর সংকট নামেও চিহ্নিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা। মানবসভ্যতা প্রতিষ্ঠার প্রধান কারিগর মানুষ হলেও এই সভ্যতাকে ধ্বংসের জন্য মানুষই দায়ী। কেননা, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী পারমাণবিক শক্তিশালী দেশসমূহ তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ব্রিটেন, ভারত ইত্যাদি নিজেদের স্বার্থে জাতিসংঘের তদারক উপেক্ষা করে কার্বন নির্গত করে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক চাকা দৃঢ় রাখতে জীবাশ্ম জ্বালানি বৃদ্ধি করে চলেছে।
প্যারিস ঐতিহাসিক জলবায়ু চুক্তি বিশ্ববাসীর মনে স্বস্তির সুবাতাস বয়ে আনলেও রাজনৈতিক নির্লিপ্ততা ও ক্ষমতার ঈর্ষা থেকে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে ২০১৭ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। বিশ্বের মোট নিঃসারণকৃত কার্বনের ১৫ শতাংশের জন্য ওয়াশিংটন একাই দায়ী। তাছাড়া বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবিলা করতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তাকারী দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র উল্লেখযোগ্য। এদিকে ১৯৯৭ সালে কিয়োটো প্রটোকলে হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি দেশকে ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসারণ ঠেকানোর লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। সেই প্রটোকল থেকেও ওয়াশিংটন নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। যখন নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যত্ সুরক্ষিত পৃথিবী গড়ার জন্য বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের হাত থেকে বিশ্বকে রক্ষা করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়, ঠিক তখন পৃথিবীর প্রধান শক্তিশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বন্ধন ও সরকার পরিবর্তনে নতুন নতুন স্বার্থ সামনে রেখে এসব জলবায়ু চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিতে জলবায়ু পরিবর্তন হয়। আর বৈশ্বিক উষ্ণতার জন্য দায়ী গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন, জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন—কয়লা পেট্রোল প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি ব্যবহার। এতে যে কার্বন ডাই-অক্সাইড উত্পন্ন হচ্ছে। তা সূর্য থেকে আরো তাপ ধরে রাখে। বায়ুমণ্ডলে এদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পৃথিবীর তাপমাত্রা দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই তাপমাত্রা অব্যাহত থাকলে সমুদ্রপৃষ্ঠের গড় উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে পৃথিবীর সমুদ্র উপকূলীয় নিচু স্থলভূমি পানিতে তলিয়ে যাবে। তাই বিশ্বের দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ, টুভ্যালু, টোবাগো ও অন্যান্য সমুদ্রতীরবর্তী এলাকা তলিয়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে বিশ্বের নেতৃত্ব প্রদানকারী দেশগুলোকে যে বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। তা হলো :
১। কলকারখানায় কালো ধোঁয়া নির্গমন কমিয়ে আনতে হবে।
২। সিএফসি নির্গত হয় এমন যন্ত্রপাতির ব্যবহার কমাতে হবে। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে হবে
৩। বনভূমি ধ্বংস বন্ধ করা এবং কৃত্রিমভাবে বনভূমি সম্প্রসারণে এগিয়ে আসা।
৪। সৌরশক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে।
৫। নবায়নযোগ্য জ্বালানির সন্ধান করতে হবে।
৬। প্রকৃতির ওপর মানুষের দুর্বিনীত আচরণ বন্ধ করা।
৭। জলবায়ুর সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা দৃঢ়বদ্ধ থাকা।
উপরোক্ত বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হলে জলবায়ু পরিবর্তন থেকে বিশ্বকে রক্ষা করা যেতে পারে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন প্রজম্মের জন্য আগামী পৃথিবী বাসযোগ্য হবে।