রহমতে আলম (সা.) : সুমহান চরিত্র (প্রথম পর্ব)


সাধারণ মানুষের চরিত্রের দুটি দিক আছে। একটি ভালো, অপরটি মন্দ। আল্লাহর প্রেরিত মহামানব যারা, তাদের চরিত্রে মন্দ দিক থাকে না। তারা আল্লাহর নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে থাকেন। আল্লাহর সৃষ্টিজগতের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে আমাদের উচিত আমাদের চরিত্রকে সুন্দর করে গড়ে তোলা। আমরা যেহেতু সাধারণ মানুষ তাই আমাদের চরিত্রকে সুন্দর করার জন্য প্রয়োজন মডেল বা নমুনা, যাকে অনুসরণ করে আমরা তাঁর মতো নিজেকে গঠনের প্রচেষ্টা চালাব। এখন প্রশ্ন আসে আমাদের চরিত্রকে সুন্দর করতে আমরা কাকে অনুসরণ করব এবং তিনি কেমন হবেন? এই সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধঃপতনের যুগে আমরা অনেকেই আমাদের পীর, উস্তাদ, নেতা বা মনের খেয়াল-খুশি মতো কাউকে আদর্শ বা মডেল হিসেবে গ্রহণ করি। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে একবারও চিন্তা করি না যে, আমরা যাদের অনুসরণ করছি বা করব ভাবছি তারা কতটা দোষমুক্ত? তারা কেউ শতভাগ অনুসরণযোগ্য কি না? কারণ তারা সাধারণ মানুষ হিসেবে জীবনচলার পথে তাদের আচার-আচরণে অসংখ্য অসঙ্গতি রয়েছে। তাই তারা অনুসরণ-অনুকরণযোগ্য নন। তবে কিছু ভালো গুণাবলি তো সবার মাঝেই থাকে। সেগুলোর অনুসরণ করা যেতেই পারে।

সুতরাং আমরা যাকে অনুসরণ করব তাকে হতে হবে শতভাগ দোষমুক্ত ও সুমহান চরিত্রবৈশিষ্ট্যের অধিকারী। আর এজন্য আমাদের সামনে সর্বপ্রথম যার চারিত্রিক উপমা আসে তিঁনি হলেন রহমতে আলম হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনুসরণীয় ও অনুকরণীয়। কেননা তাঁর চরিত্রের দলিল সয়ং আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমে আলোচনা করে তাঁকে পৃথিবীর সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থানে পৌঁছে দিয়েছেন, যা আর কারো পক্ষে অর্জন করা অসম্ভব। তাই আমাদের জীবনেকে সুন্দর চরিত্রবৈশিষ্ট্যে সজ্জিত করতে সংক্ষেপে কয়েকটি পয়েন্টে রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুমহান চরিত্রের বিভিন্ন দিক আলোকপাত করব, পাঠকমাত্রই উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ।

কুরআন শরীফের আলোকে রহমতে আলম (সা.) এর সুমহান চরিত্রঃ

রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক সুমহান চরিত্রের অধিকারী যার চরিত্রের সার্টিফিকেট সমস্ত সৃষ্টিকুলের খালিক ও মালিক মহান আল্লাহ তায়ালা সূরা আহযাবের ২১ বলেছেন- “অবশ্যই তোমাদের জন্য রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্যে উত্তম চরিত্র, তার জন্য যে আসা রাখে আল্লাহ ও শেষ দিনের এবং আল্লাহকে বেশী স্মরণ করে”।

অন্যত্র সূরা ক্বালামের ৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেছেন- “নিশ্চয়ই আপনি হচ্ছেন সু-মহান চরিত্রের অধিকারী”।

উপরে বর্ণিত দুটি আয়াতে কারীমা থেকে আমরা স্পষ্ট জানতে পারলাম রহমতে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চরিত্রের সার্টিফিকেট স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন। সুতরাং নিঃসন্দেহে প্রতিটি মানুষের উচিত হবে তাঁর অনুসরণ ও অনুকরণ করা।

হাদীস শরীফের আলোকে রহমতে (সা.) এর সুমহান চরিত্রঃ

দুনিয়ার জমিনে যত মানুষ এসেছেন কেউ কখনও তার চরিত্রের ব্যাপারে কোন গ্যারান্টি দিতে পারেননি। কিন্ত রহমতে আলম নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একমাত্র মহামানব যিনি তাঁর নিজ চরিত্রের কথা ঘোষণা করেছেন। আদাবুল মুফরাদ ও মাজমাউয যাওয়ায়েদে বর্ণিত হয়েছে- “হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- উন্নত চরিত্রের উৎকর্ষ সাধন করতেই আমি প্রেরিত হয়েছি”।

আল-ফাওয়ায়েদুল জালিয়াহ ও কাশফুল খিফাতে এসেছে- “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আমার রব আমাকে সর্বোত্তম শিষ্টাচার শিক্ষা দিয়েছেন”।

সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফের হাদীসে এসেছে- “হযরত আনাস (রাঃ) বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন মানুষের মধ্যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী”।

ত্বাবরানীর হাদীসে এসেছে- “হজরত সাফিয়াহ বিনতে হুয়াই (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অধিক সুন্দর চরিত্রের আর কাউকে দেখিনি”।

মুসনাদে আহমদে এসেছে- “হযরত সাঈদ ইবনে হিশাম ইবনে আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন একবার হযরত আয়শা (রাঃ) কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, তিনি উত্তরে বলেন- কুরআনুল কারীমই তাঁর চরিত্র ছিল”।

সুতরাং উপরে বর্ণিত কয়েকটি হাদীস শরীফ থেকে দিনের আলোর মত পরিষ্কার হল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চরিত্র ছিল সর্বোত্তম চরিত্র। তাঁর জীবন ছিল কুরআনুল কারীমে আলোয় আলোকিত একটি উত্তম চরিত্রের জীবন। তাই নিজের জীবনকে উত্তম চরিত্র দ্বারা সাজাতে হলে রহমতে আলম নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিকল্প নেই।

এশিয়াবিডি/ডেস্ক/কামরান
আরও সংবাদ