বাংলাদেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন; ইউরোপ জুরে উত্তাল
কোটা সংস্কার ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে উত্তাল বাংলাদেশ। টানা এক সাপ্তাহ ধরে চলা এই আন্দোলনে কাপিয়েছে পুরো বিশ্ব।
আন্দোলনে সহিংসতায় পুলিশ বিজিবি ও র্যাবের গুলিতে ২০০ এর অধিক ছাত্র, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ হত্যার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে আন্দোলন দামিয়ে রাখতে শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনী মোতায়েন করে কারফিউ জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার।
রবিবার প্রেস রিলিজের মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মাঠের বিরোধীদল বিএনপি ও জামায়াত গনহত্যা উল্লেখ করে সরকার পতন আন্দোলনের ডাক দিয়েছে।
সবকিছুর সাথে একাত্মতা পোষণ করে গোটা ইউরোপ জুরে শুরু হয়েছে প্রবাসীদের আন্দোলন। বাংলাদেশে আন্দোলন শুরু হওয়ার পরের দিন থেকে টানা ৭ দিন ধরে ইংল্যান্ডের কয়েকটা শহরে প্রবাসীদের বিভিন্ন প্লেকার্ড হাতে নিয়ে আন্দোলন করতে দেখা যায়।
বাদ যায় নি মানবাধিকারের দেশ ফ্রান্সেও। শনি ও রবিবার টানা দুইদিন ফ্রান্সের ঐতিহাসিক রিপাবলিক চত্বরে হাজার হাজার প্রবাসীদের উপস্থিতিতে সরকার বিরোধী ও কোটা আন্দোলনের ছাত্রদের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।
এদিকে রবিবার বিকেলে স্পেনের বার্সেলোনায় বাংলাদেশের সাবেক শিক্ষার্থীদের আয়োজনে প্লাসা ইউনিভার্সিতাতে বিশাল এক প্রতিবাদ সবার আয়োজন করা হয়। সেখানে সমন্বয়ক হিসেবে আন্দোলন পরিচালনা করেন বাংলাদেশী শিক্ষার্থী এবিএম মাজহারুল ইসলাম।
এই আন্দোলন নারী পুরুষ, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
সেখানে ক্যাম্পেইন ফর মিডিয়া ফ্রীডমের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশের চলমান সহিংসতায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত সিলেটের সাংবাদিক আবু তাহের মোহাম্মদ তুরাব ও ঢাকার সাংবাদিক মেহেদি হাসান হত্যার নিন্দা জানানো হয়। একই দিনে স্পেনের রাজধানী মাদ্রিদেও এই আন্দোলন ঘন্টা ব্যাপি চলে।
তবে রবিবার রাতে বার্সেলোনার একটি রেস্টুরেন্টে এক প্রতিবাদ সভায় বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনে জামায়াত বিএনপির যোগসাজশে সহিংসতা হয়েছে দাবী করে কাতালুনিয়া যুবলীগ। একই সাথে মাদ্রিদে প্রতিবাদ সভা করে স্পেন আওয়ামীলীগ।
তবে সরকার বিরোধী আন্দোলনে সাধারণ প্রবাসীদের দলমত নির্বিশেষে ব্যাপক অংশগ্রহণ দেখা যায়। বৃদ্ধ, যুবক, নারীদের পাশাপাশি সেখানে শিশুদের হাতেও প্লেকার্ড নিয়ে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
স্পেন ছাড়াও, ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডস, পর্তুগাল, ফিনল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইতালি, জার্মানিসহ অনেক দেশে প্রবাসীরা বাংলাদেশের দূতাবাস ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দাড়িয়ে আন্দোলন করতে দেখা গিয়েছে।
প্রবাসীদের আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ দাবী ছিল, দ্রুত বাংলাদেশের নেটওয়ার্ক চালু করে বাংলাদেশের সাথে ২ কোটি প্রবাসীদের ভার্চুয়াল সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশের কারফিউ তুলে নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থী হত্যায় জড়িত সকল প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা।
একই সাথে বাংলাদেশে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ করা এবং শতাধিক শিক্ষার্থী হত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক ভাবে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করা। তাছাড়া পুলিশের গুলিতে প্রকাশ্যে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাইদ হত্যার দায়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ লেলিয়ে দেওয়ার দাবীতে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দাবীও জানান তারা।
তাছাড়া ব্যাপক ভাবে প্লেকার্ডে বাংলাদেশ সরকারের পদত্যাগ দাবী করেন প্রবাসীরা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের হাইকোর্টে কোটা পুনর্বহালের রীটের বিরুদ্ধে গতকাল সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগে কোটা পুনর্বহাল বাতিল করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে রায় ঘোষণা করে।
এশিয়াবিডি২৪/ডেস্ক/খান/স্পেন