বিদ্যুতের জন্য সিলেটের পাবলিক খুব কষ্টে আছে, এটাই সত্য
পররাষ্ট্রমন্ত্রী: বিদ্যুৎমন্ত্রী সব সময়ই বলেন, দেশে বিদ্যুতের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সিলেটে এলেই মানুষজন আমাকে বলেন, দিন-রাত লোডশেডিং থাকে। কেন?
নির্বাহী প্রকৌশলী: স্যার, সিলেট নগরে ভূগর্ভস্থ বৈদ্যুতিক লাইনের সংযোগ স্থাপনসহ বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় মাঝেমধ্যে সংযোগ শাটডাউন করতে হচ্ছে। ফলে সামান্য সময়ের জন্য বিদ্যুৎ-বিভ্রাট হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী: এসব উন্নয়নকাজ তো সকালের দিকে হচ্ছে। তাহলে দুপুর ও রাতে কেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন থাকছে? দেশের কোথাও বিদ্যুতের সমস্যা নেই। অথচ সিলেটে এমনটা হচ্ছে। এটা খেয়াল করেন। সিলেটবাসী যেন বিদ্যুৎহীন না থাকেন।
ওপরের এই কথোপকথন হচ্ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সিলেট বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মো. ফজলুল করিমের মধ্যে। আজ শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এসব কথা হয়। সিলেটের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের উন্নয়ন কার্যক্রমের অগ্রগতি বিষয়ে আয়োজন করা হয় এই মতবিনিময় সভার। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন স্থানীয় সাংসদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। জেলা প্রশাসন আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব হোসেন।
এরপর পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকার উন্নয়নবান্ধব সরকার। মানুষের দুর্ভোগ এড়াতে আমরা কাজ করছি। পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ থাকা সত্ত্বেও সিলেটবাসীকে কেন বিদ্যুৎহীন থাকতে হবে? বিদ্যুতের জন্য সিলেটের পাবলিক খুব কষ্টে আছে, এটাই সত্য। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দ্রুত সমাধান করবেন, এটাই প্রত্যাশা করছি। পুনরায় যেন এ অভিযোগ শুনতে না হয়।’
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর সংসদীয় এলাকা সিলেট-১ আসনের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের খোঁজখবর নেন। কীভাবে প্রকল্পগুলো দ্রুত শুরু ও শেষ করা যায়, তা নিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেন। বক্তৃতায় তিনি বলেন, ‘সিলেট শহরকে একটি পর্যটকবান্ধব আধুনিক নগর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এর জন্য যেসব উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন, সব নেওয়া হবে। এই অঞ্চলের মানুষ যেন কোনো অবস্থাতেই দুর্ভোগের মুখোমুখি না হয়, সেটিই আমার চিন্তাভাবনার মূল বিষয়।’
মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী, সহসভাপতি আশফাক আহমদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুজাত আলী রফিক, জেলা পরিষদের সদস্য শাহনুর, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহিত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মকসুদ আহমদ প্রমুখ। এর বাইরে সিলেটের বিভিন্ন পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তারাও বক্তব্য দেন।
এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, শিল্প-কলকারখানায় যেন গ্যাস-সংযোগ দেওয়া হয়। অবশ্য বাসাবাড়িতে গ্যাস-সংযোগ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। কিন্তু সিলেটে নাকি শিল্প-কলকারখানায়ও সংযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এটা কেন? শহরে কোনো খেলার মাঠ নেই। কালা পাথরের মাঠ নামে একটি উন্মুক্ত জায়গা বাছাই করা হয়েছে। দ্রুত সেখানে শিশু-কিশোরদের উপযোগী একটি মাঠ প্রস্তুত করা হবে। জেলা প্রশাসন মাঠ প্রস্তুতে সমন্বয় করবে।’
এ কে আব্দুল মোমেন এ সময় জানান, সিলেট রুটে একটি নতুন ট্রেন চালুর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে। এ ছাড়া সিলেট থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রাম রুটে নতুন কিছু এসি বগি সংযুক্ত করার জন্যও সুপারিশ করা হয়েছে।
সভায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বরাতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, আগামী মার্চ মাসে সিলেট-লন্ডন সরাসরি বিমানের ফ্লাইট চালু হবে। এখন প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর সংস্কারকাজ চলছে। এই ফ্লাইট চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হবে। এ সময় এ কে আব্দুল মোমেন সিটি করপোরেশনের সীমানা বাড়ানোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রস্তাব পাঠানোর জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা দেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম জানান, প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণ শেষে আগামী এক মাসের মধ্যে এ প্রস্তাব পাঠানো হবে। বর্তমানে সিটি করপোরেশনের আয়তন রয়েছে ২৬ বর্গকিলোমিটার। প্রস্তাবিত সীমানায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন।
সভায় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেট নগরকে পর্যটকবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার জন্য পর্যটকদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
প্রথম আলো