কৃষ্ণপক্ষ অথবা আরেকটি অপেক্ষা
ফাতেমা আবেদীন:
আজ আষাঢ়ের কত তারিখ, কিছুতেই মনে করতে পারছে না অরু। অসম্ভব বৃষ্টি নেমেছে। কুহক বাইরে গেছে। বৃষ্টি হলেই গলিতে পানি জমে যায়। ছেলেটার মোবাইলটা নষ্ট হয়েছে দুদিন আগে। সারাব সারাব করেও আর সারানো হয়নি। তাই গলি থেকে পানি টপকে কীভাবে কুহক বাসায় আসবে, তাকে তা বলার জোও নেই। সিটি করপোরেশন এবার আবার বড় বড় চারটি ম্যানহোল কেটেছে। পানি জমলে এখন হেঁটে বা রিকশা দিয়ে ফেরার উপায়ও থাকছে না। একটু পর বাইরে যাবে অরু। এ বাসায় ওরা ভাড়া এসেছে ১৯ দিন। কাউকে যে বলে যাবে ছেলেটার কথা, এ এলাকায় তার তেমন কেউই নেই। এদিকে ওকে বের হতেই হবে। যে মেয়েটাকে সে পড়ায়, কাল তার ফাইনালের প্রথম পরীক্ষা।
আজ কমপক্ষে তিন ঘণ্টা পড়াতে হবে। টিউশনিটাই এ মাসের সম্বল। এদিক-সেদিক খ্যাপের কাজ করে যা টাকা জমেছিল, নতুন বাসা পাল্টে তা খতম। বাসাটা না পাল্টালেও চলছিল না। মারুফের হানা বন্ধ করতেই একরকম রাতের আঁধারে কুহককে নিয়ে অল্প কয়েকটা জিনিসসহ বাসা ছেড়েছে।
কুহকের এক ক্লাসমেট থাকে পাশের পাড়ায়। আজ দুপুরে তার বাসায় ওর দাওয়াত। কুহকের ওই বন্ধুর মা–ই অরুকে এ বাসা খুঁজে দিয়েছেন। বাসার সবই ঠিক আছে, শুধু পানি উঠে রাস্তাটা ডুবে যায়। এ মুহূর্তে কুহককে একটা ফোন করতে পারলে ভালো হতো, কুহকের কাছে ফোন না থাকলেও ওর বন্ধুর মায়ের তো আছে। কিন্তু সমস্যা একটাই, অরুর মোবাইলের ব্যালেন্স শেষ।
যেদিন কোনো একটা গন্ডগোল লাগে, সেদিন বাইনারি অঙ্কের মতো সারি বেঁধে গন্ডগোলগুলো লাগতেই থাকে। সকালে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ব্যালেন্স শেষ হয়েছে। অরুর মায়ের মোবাইলে টাকা থাকলেও তিনি কখনো কল ব্যাক করেন না। এক বছর ধরে মেয়ের সঙ্গে কথা বলছেন, এর আগে ১৩ বছর কথা বন্ধ ছিল। রিটায়ার্ড করেছেন, আলাদা হয়ে গেছেন অরুর বাবার কাছ থেকে। এ জন্য হয়তো মেয়ের একাকিত্বটা এখন খানিকটা বুঝতে পারেন। অবশ্য অরু নিজেই ফোন দিয়ে খোঁজখবর নেয় বেশি। আসলে এ শহরে কথা বলার জন্য নিজের মানুষ খোঁজে অরু। মায়ের সেই ব্যক্তিত্বটা এখনো আছে। তিনি চলেন ‘তোমার দরকার’ থিওরিতে। তাঁর এই থিওরির কারণে ১৯৯৮ ব্যাচের এসএসসি পরীক্ষার্থী হয়েও অরু পাস করেছে ৯৯-এ। পরীক্ষার আগের রাতে মাকে বলে রেখেছিল ভোরে ডেকে দিতে। কিন্তু পরদিন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মায়ের একটা সেমিনার ছিল, তিনি নিজের মতো চলে গিয়েছিলেন, বাড়ির কাউকে বলেও যাননি। রাতে ফিরে যখন শুনলেন অরু পরীক্ষা মিস করেছে, খুব নির্লিপ্ত গলায় বললেন, ‘পরীক্ষা তোমার, তোমার দরকারে তুমি নিজে ওঠোনি কেন?’
সেদিনের পর থেকে মায়ের সঙ্গে নিতান্ত প্রয়োজন না পড়লে আর কথা বলেনি অরু।
অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের পর থেকেই মায়ের সঙ্গে তার কথা বলার প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছিল। অরুর নাম রেখেছিলেন ওর বড় মামা। জন্মের অনেক পরে তার এই নামকরণ। অরুর শিক্ষাসচিব মা তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ভাইয়ের আবদার ফেলতে পারেননি। তাই সিতারা ফেরদৌস থেকে ক্লাস ফোরে অরুর নাম হলো অরু ফেরদৌস। তার বাবা ডাক্তার আজহার উদ্দিন এ নিয়ে একটু গাঁইগুঁই করলেও পরে মেনে নিয়েছিলেন।
মামার প্রিয় উপন্যাস ছিল হুমায়ূন আহমেদের কৃষ্ণপক্ষ। উপন্যাসের নায়িকার নামে রেখেছিলেন ভাগনির নাম। অরু নিজেও এই চরিত্রের প্রতি ভীষণ অবসেসড ছিল। সেই ক্লাস সিক্সে মামা যেদিন কৃষ্ণপক্ষ বইটা তাকে দেন, সেদিন থেকে সব বাদ দিয়ে একটা মুহিবের খোঁজে ঘুরে বেড়িয়েছে সে। আসলে দেখতে চেয়েছে, এ উপন্যাসের মতো সত্যিই ভালোবাসার মানুষ নাকের সিনকি ঝেড়ে তা শার্টের হাতায় মুছে ফেললে সে দৃশ্য ভীষণ ভালো লাগে কি না।
বাস্তবে ভীষণ শুচিবায়ুগ্রস্ত মেয়ে অরু। তাই মুহিবরা কেমন হয়, তাদের প্রতি ভালোবাসাটা কৃষ্ণপক্ষর মতো হয় কি না, তার দেখার ছিল সেটাই।
অরুর বাবা মেয়ের চিকিৎসা করে আসছিলেন নিয়মিত। অরুর রোগটার নাম অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার। বাসায় কেউ এসে হ্যান্ডশেক করলেও হাত ধুয়ে ফেলত অরু। আত্মীয়স্বজনদের খাটে বসতে দিত না, ঘরে কেউ ঢুকলে মুছে ফেলত ঘর। মেয়ের এ আচরণে তার মা বিরক্ত ছিলেন। তিনি সেই আমলের বিসিএস। ভদ্রমহিলার ঠাঁটবাটই আলাদা। সন্ধ্যা সাতটার পর ডিনার সারতেন। বাচ্চারা কী খেয়েছে না খেয়েছে, জিজ্ঞাসা করতেন না কোনো দিনই। বরং অরুর বাবা আজহার সাহেব ছিলেন অনেক কেয়ারিং। ডাকসাইটে কার্ডিওলজিস্ট তিনি। প্রায়ই তাঁর ওটি থাকত। বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত দুটো-তিনটে। ভোরে আবার ঢাকা মেডিকেলে ক্লাস। অরুরা ঘুম থেকে ওঠার আগেই বেরিয়ে যেতেন।
তবে প্রায়ই মাঝরাতে ঘুমের ঘোরে অরু শুনতে পেত, ‘আমার সিতারা বেটিয়া কি ঘুমিয়েছে?’ হয়তো মেয়ের মাথার বালিশ ঠিক করে দিতেন, নয়তো গায়ে টেনে দিতেন কাঁথা। কখনো মুড ভালো থাকলে কপালে একটা চুমুও জুটত। এসব সময় জেগে থাকলেও অরু কোনো দিন চোখে খোলেনি। বাবা বিব্রত হবেন, তাই ঘাপটি মেরে পড়ে থাকত সে। ইদানীং মাঝেমধ্যে মনে হয়, বাবার সঙ্গে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা দরকার ছিল। তাহলে এই ৪০ বছরের দোরগোড়ায় এসে এতটা একা সে কখনোই হতো না। অন্তত যেদিন পালিয়ে গিয়ে মারুফকে বিয়ে করেছিল, হয়তো বুঝিয়ে বললে বাবা পাশে থাকতেন।
সেই দিনটা ছিল বড়ই অদ্ভুত। বেলা ১০টার আগে ঘুম থেকে না–ওঠা অরু উঠেছিল ভোর পাঁচটায়। মায়ের আলমারি থেকে সবুজ সিল্কের সাদা কাঁথা স্টিচের শাড়ি বের করে পরেছিল। ম্যাচ করে পরেছিল পান্না বসানো মিনা করা কানের দুল, এটাও মায়ের। নাশতার টেবিলে মেয়েকে দেখে বাবা একটু হতভম্ব হয়েছিলেন, ‘বেটিয়া, কই যাও?’ সেদিন কী অবলীলায় মিথ্যা বলেছিল সে, ‘বান্ধবীর বিয়ে।’ অরুর যে মা কোনো দিন সন্তানদের দিকে ফিরে তাকান না, কফিতে চুমুক দিতে দিতে তিনিও বলেছিলেন, ‘ইউ লুক সো প্রিটি।’
বিকেলে আজিমপুর অফিসার্স কোয়ার্টারের কাজি অফিসে মারুফের সঙ্গে বিয়ে হলো অরুর। আগের দিন রাতে বড় মামা এসেছিলেন তাঁর এক পিএইচডির ছাত্রের সঙ্গে অরুর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। মা পারলে পরের সপ্তাহেই আংটিবদলের দিন ঠিক করেন। এরপর কী যে হলো, অরু খানিকটা হুট করেই মারুফকে নিয়ে গেল কাজি অফিসে। একরকম ঝোঁকের বশেই। সে কি মারুফের মধ্যে মুহিবকে পেয়েছিল?
মারুফকে খুঁজে পাওয়ার গল্প শুনলে সবাই অরুকে বেকুবই বলবে। আদতে অরুদের ফ্যামিলির মতো চার দেয়ালের পরিবারে বড় হয়ে মানুষ চেনা একটু দায়ই বটে। সারা দিনে কথা বলার মানুষ বলতে ছিল মনা খালা। তিনিই দেখভাল করতেন তাদের। অরুর ভাই ইফতি সুন্দর করে বলত, ‘এ বাড়ির চেয়ারম্যান মনা খালা।’ ওরা কী খাবে, কোন জামা পরে বাইরে যাবে—সবই তিনি ঠিক করে দিতেন। এসব করতে করতে মনা খালা বলতেন, ‘আমি আর কিডা তুমাগেরে, আমি তো বাইরের মানুষ, বাইরে যাও, দুইন্যা চিন্না ফেরত আসো।’
বাবা-মায়ের সঙ্গে খুব ভালো মুহূর্ত বলতে তার মনে পড়ে বড় মামার আসাটাই। মামা এসে দুনিয়ার বই-পুস্তক নিয়ে গল্প করতেন। সেই আলাপ শুনতেন বাবা-মা। বাবার বন্ধু ছিলেন মামা। সেই সূত্রেই বিয়ে। মা ভালোবাসতেন এক আর্টিস্টকে। প্রথম দিকে অরু ভাবত, তার বাবা-মায়ের প্রেমের বিয়ে। পরে বুঝেছে, এত শীতল একটা সম্পর্ক কোনো প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে থাকতে পারে না।
মারুফের চরিত্র ঠিকভাবে জানার পরও এখনো কোনো কোনো মাঝরাতে তার জন্য বুকের মধ্যে হাহাকার ওঠে অরুর। ওর জন্য মারুফেরও কি এমন হয়? মারুফের ভেতরে মুহিবের কোনো গুণ কি ছিল? হুমায়ূন আহমেদ হয়তো উত্তর দিতে পারতেন। অবশ্য ক্লিনিক্যাল লায়ারদের নাকি মায়া-মমতা থাকে না। মারুফ তো ক্লিনিক্যাল লায়ারই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় বসে শিঙারা খেতে খেতে অরু একদিন বলেছিল, কৃষ্ণপক্ষর মুহিবের মতো কাউকে পেলে বিয়ে করবে। অরুর মুহিবপ্রীতি ক্যাম্পাসে চাউর ছিল, মারুফ ওরফে অরুর মুহিবও জেনেছিল। নানা কৌশল রপ্ত করে, নিজের সম্বন্ধে প্রচুর মিথ্যা বলে অরুর জীবনে ঢুকেছিল সে। তবে সব নায়ক তো হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসের মতো হয় না। অরুর সামাজিক স্ট্যাটাস, ওর বাবার প্রতিপত্তি—এগুলো লক্ষ্য করেই এগিয়েছিল লোভী প্রকৃতির মারুফ।
মারুফের জালিয়াতি ধরা পড়ল অরুর বিয়ের দেড় মাস পর। তত দিনে তার গর্ভে মারুফের সন্তান। আর মারুফের মা সারা দিন ছেলেকে একটা কথাই বলেন, ‘কী বাড়িতে যে বিয়ে করলি, বড়লোকের বেটি পালতে হচ্ছে, কিছু তো দিল না।’ তত দিনে অরুর গায়ে মারুফের হাত তোলা নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর কথায় কথায় চলছে বাড়ি থেকে ওকে বের করে দেওয়ার হুমকি।
কুহককে তিন মাসের পেটে নিয়ে অরু যখন শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে আসে, সে সময় ওর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মনা খালা। তাঁর এক বোনের বাড়িতে রাখলেন অরুকে। নিয়মিত মাসের টাকা, ফল, চাল-ডাল দিয়ে যেতেন। আসলে এগুলো খালাকে দিয়ে করাতেন বাবাই, অনেক পরে জেনেছে অরু। তবে এত কিছু করলেও স্ত্রীর ভয়ে নিজের বাড়ির দরজা মেয়ের জন্য খুলতে পারেননি বাবা। আর আত্মসম্মানের কারণে অরু নিজেও যেতে চায়নি বাপের বাড়িতে।
ছেলে কুহককে নিয়ে একা একা টিকে আছে সে। এই শহরে। ১৪টা বছর।
কুহকের জন্মের এক মাস পর ডিভোর্স ফাইল করেছিল অরু। আর পারছিল না। ছেলেকে এক বান্ধবীর মায়ের কাছে রেখে ক্লাস করে করে অনার্স পাস করেছিল। এর বেশি পড়ার সামর্থ্য ছিল না। ছেলেকে কার কাছে রেখে অফিসে যাবে, এর সুরাহা না থাকায় চাকরি করা হয়নি তার। ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্রী হওয়ায় কয়েকটা বেশি পয়সার টিউশনি আর অনুবাদের কাজ দিয়ে ছেলেসহ দিন কেটেছে। কেটে যাচ্ছেও। এখন ঝামেলার মধ্যে যা তা হলো, ছেলের অধিকার নিয়ে মাঝেমধ্যে মারুফের হম্বিতম্বি, আর সে যেহেতু অভিভাবকহীন সুন্দরী ডিভোর্সি, তাই তার প্রতি কারও কারও অযাচিত উৎপাত।
কলবেলের আওয়াজে সংবিৎ ফেরে অরুর। ময়লা নিতে এসেছে ময়লাওয়ালা। সে-ই তাকে বলল, কোথাও যেতে হলে রাস্তা ডুবে যাওয়ার আগেই চলে যান, মেইন রোড থেকে আধমাইল ভেতরের পুরো রাস্তাই কাটা। কাটা না থাকলে এমনিতে রিকশা দিয়ে পার হওয়া যেত। তবে এখন নৌকা ছাড়া গতি নেই। আজকাল এসবে অরু বেশ অভ্যস্ত হয়ে গেছে। অথচ আগে কী ভয়টাই না পেত। এমন ঢাকাও যে আছে, ওর বাপের বাড়ির লোকেরা জানেই না!
দুই.
রাত নয়টায় বাড়ি ফিরে অরু দেখল, কুহক তখনো ফেরেনি। রাস্তা থেকে পানিও নামেনি। নৌকা নেমেছে। ১০ টাকা দিয়ে নৌকায় পানি পার হয়ে বাসায় ঢুকছে সে। ঘরে ঢুকে ছেলের বন্ধুর মাকে ফোন দিয়ে জানা গেল, সন্ধ্যা সাতটার আগেই চলে গেছে কুহক। এ সময় কোথায় যেতে পারে ছেলেটা, ভাবতে ভাবতে কোনো কূল-কিনারা পেল না অরু। তার মাথা ঝাঁ ঝাঁ করছে। অগত্যা যে মারুফের যন্ত্রণায় ফোনের সিম পালটেছিল, তাকেই ফোন দিল—পাঁচ-ছয়বার। ধরেনি। কুহকের দাদিকে ফোন দিতেই খ্যাক করে উঠলেন, ‘যে পোলারে নিয়া ভাগছ, হেই আমাগো এইখানে আসব কেন?’
কুহক তাহলে যাবে কোথায়?
আবার বৃষ্টি নেমেছে। ঝুম বৃষ্টি। ল্যাম্পপোস্ট আর আশপাশের বাড়িগুলোর আলোয় ডুবে যাওয়া রাস্তার কালো পানির পাক স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে অরু। নিচে নেমে এসে দ্রুত এক নৌকাওয়ালাকে সে জিজ্ঞেস করল, আকাশি রঙের শার্ট পরা ১৩ বছরের একটা ছেলেকে দেখেছে কি না?
লোকটা জানাল, ব্যাটারি গলির মুখে নৌকা থেকে এক বাচ্চা ছেলে পড়ে ম্যানহোলে তলিয়ে গেছে, ফায়ার সার্ভিস এসেছে, বাচ্চা খোঁজা হচ্ছে।
ওটাই কি কুহক!
অরুর এ সময় কিছুই করার ছিল না, বাবাকে ফোন করা ছাড়া।
ডাক্তার আজহার চলে এলেন পুলিশের বড় কর্তাকে সঙ্গে নিয়ে। অরু ইতিমধ্যে দুবার জ্ঞান হারিয়েছে। আকাশ ফুটো হয়ে বৃষ্টি পড়ছে। কিছুক্ষণ আগে অরু যখন বড় রাস্তার ডিভাইডারের ওপর দাঁড়িয়ে কাঁদছিল, সে সময় এক মহিলা তাকে জানিয়েছিলেন, তিনি ওই পানি পারের নৌকায় ছিলেন, কিন্তু ছেলেটার শার্টের রং তার মনে নেই। আর এত ঢেউ, ম্যানহোলে এত পানির টান, ছেলেটা নাকি দু-একবার বলেছিল তার কাছে টাকা নেই, বাড়ি গিয়ে টাকা দেবে।
অরু মনে মনে বলল, কুহকের কাছে টাকা ছিল তো?
মেয়েকে জোর করে বাড়িতে নিয়ে এসেছেন আজহার সাহেব। বেশ কয়েকবার জ্ঞান হারিয়েছে সে। খুব কড়া কোনো সিডেটিভ দিতে চাইছেন, আবার দিচ্ছেনও না। অরু বিড়বিড় করছে কুহক বলে, আজহার সাহেবও ‘বেটিয়া, সব ঠিক হয়ে যাবে’ বলে বিড়বিড় করছেন। অরুর শুধু মনে হচ্ছে, কুহক আর নেই, ছেলেকে সে হারিয়ে ফেলেছে।
১৪ বছর পর নিজের বাড়িতে অরু ঢুকছে খুব টালমাটাল পায়ে। মনা খালা ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন। অরু শুধু বলল, ‘আমি একটু শোব।’
দোতলার শোয়ার ঘরে ঢুকতে ঢুকতে অরু শুনতে পেল, কলবেল আর টেলিফোন একসঙ্গে ঝনঝন করে বাজছে। নিশ্চয় কুহকের কোনো খবর এসেছে!