কাউন্সিলর মিজানকে নিয়ে লালমাটিয়ার কার্যালয়ে অভিযানে র্যাব
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজান র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতারের পর তাকে নিয়ে লালমাটিয়ার তার কার্যালয়ে অভিযান শুরু করেছে র্যাব। এ প্রতিবেদন লেখার সময় অভিযান চলছিল।
র্যাবের একটি বিশেষ টিম মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে গুহ রোডের হামিদা আবাসিক গেস্ট হাউজের সামনে থেকে মিজানকে আটক করে। র্যাব জানিয়েছে, তিনি ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
দুর্নীতি-সন্ত্রাস-ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকেই গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন মিজান। দেশ ছাড়ার উদ্দেশে চলে যান মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের গুহ রোড এলাকায়। কয়েকদিন ধরে ওই এলাকায় মিজানের আনাগোনা দেখেছেন অনেকে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এএসপি মিজানুর রহমান ভূইয়া পাগলা মিজানকে গ্রেফতারের বিষয়ে বলেন, ‘চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে হাবিবুর রহমান মিজানকে আটক করা হয়েছে। তিনি দেশ থেকে পার্শ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি আবদুস সালেক বলেন, ‘টিভি দেখে জানতে পেরেছি আমাদের এলাকা থেকে র্যাব ওই কাউন্সিলরকে আটক করে নিয়ে গেছে। তার এখানে অবস্থানের বিষয়ে বা র্যাবের অভিযানের বিষয়ে আমাদের কিছু জানা ছিল না।’
চলমান ‘শুদ্ধি অভিযানের’ অংশ হিসেবেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের আলোচিত নেতা হাবিবুর রহমান মিজানকে গ্রেফতার করে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। হত্যা, মাদকের কারবার,চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তার নাম।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের চলমান ‘শুদ্ধি অভিযানের’ মধ্যে হঠাৎ করেই লাপাত্তা হন ক্ষমতাসীন দলের নেতা মিজান। গত সোমবার রাতে মোহাম্মদপুরের আওরঙ্গজেব রোডে মিজানের ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় র্যাব। কিন্তু সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার সকালে আওরঙ্গজেব রোডে মিজানের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই বাড়িতে মিজান তার স্ত্রী, ছেলে ও ছেলের বউকে নিয়ে থাকেন। গত সোমবার থেকে মিজান বাড়িতে নেই। ওইদিনই র্যাব এসে তাকে খুঁজে গিয়েছিল।
মিজানের ছেলে মামুন বৃহস্পতিবার মামুন বাসা থেকে বের হয়ে যান। তিনিও ফেরেন নাই। শুক্রবার সকালে মিজানের স্ত্রীও বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছেন।
মোহাম্মদপুর এলাকায় জমিদখল, টেন্ডারবাজি, প্রভাব বিস্তারসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে পাগলা মিজানের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে একাধিক মামলাও রয়েছে। তিনি মোহাম্মদপুরের বাসিন্দাদের কাছে ত্রাস হিসেবে পরিচিত। তার ভয়ে তটস্ত থাকেন সেখানকার বাসিন্দারা।
প্রসঙ্গত ১৪ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির এক সভায় চাঁদা দাবির অভিযোগে ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে অপসারণের নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি যুবলীগ নেতাদের বিষয়েও চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, যুবলীগের এক নেতা অস্ত্র উঁচিয়ে চলে। আরেকজন প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করে বেড়ায়।
এর পর গণমাধ্যমে যুবলীগ নেতাদের সংশ্লিষ্টতায় ঢাকার ৬০টি জায়গায় ক্যাসিনো পরিচালনার খবর প্রকাশ হয়। ১৮ নভেম্বর ফকিরাপুলের ইয়াংমেনস, ওয়ান্ডারার্স এবং গুলিস্তানে মুক্তিযোদ্ধা ক্রীড়া সংসদে অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম, বিপুল পরিমাণ মদ ও ৪০ লাখের বেশি টাকা উদ্ধার করে র্যা ব। ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে ওই দিনই যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করা হয়, যিনি ইয়াংমেনস ক্লাবের সভাপতি ছিলেন।
পাশের ওয়ান্ডারার্স ক্লাব থেকেও জুয়ার সরঞ্জাম উদ্ধার হয়। এ ক্লাব পরিচালনার নেতৃত্বে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার। এর পর ধানমণ্ডির কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে অভিযান চালিয়েও ক্যাসিনো চালানোর প্রমাণ পায় র্যা ব। অস্ত্র-গুলি ও ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয় ক্লাবের সভাপতি কৃষক লীগের সহসভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজকে।
এর মধ্যে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারি করা গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীমকে গ্রেফতার করা হয়। পরে গ্রেফতার করা হয় মোহামেডান ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ ও বিসিবির পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়াকে।
দুবাই থেকে গ্রেফতার করা হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে। পরে গ্রেফতার করা হয়েছে ক্যাসিনো সম্রাট যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযানকে ‘শুদ্ধি অভিযান’ নাম দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সন্ত্রাস, চাঁদবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের ভাসানচরে পাঠানো হবে।