কাতারে মাদক ব্যবসায় প্রবাসী বাংলাদেশি জরিত
কাতারে প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছেন। অথচ কাতারে বাংলাদেশিদের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। চার লাখেরও বেশি বাংলাদেশি এখন কাতারে কর্মরত। এর মধ্যে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পরিকল্পনাবিদ, শিক্ষক, ইমামরা এখানে মাথা উঁচু করেই প্রতিযোগিতায় টিকে আছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান কাতারের জন্ম ইতিহাস পাল্টে দিয়েছেন। রচনা করেছেন নয়া এক ইতিহাস। গবেষণা করে প্রমাণ করেছেন কাতার কখনও পরাধীন ছিল না। তাই ১৯৭১ সনে দেশটি স্বাধীন হয়েছিল বলে যে ইতিহাস লিপিবদ্ধ হয়েছিল এটা সঠিক ইতিহাস নয়।
কাতার সরকারের সিনিয়র গবেষক ড. হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন একদল গবেষক দীর্ঘকাল গবেষণা করে বের করেছেন, ১৮৭৮ সনের ১৮ই ডিসেম্বর হচ্ছে কাতারের জাতীয় দিবস। ২০০৭ সনের ২১শে জুনের এক ঘোষণায় ১৮ই ডিসেম্বর জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। এর আগে ৩রা সেপ্টেম্বর স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালিত হতো। একজন বাংলাদেশি হিসেবে এটা নিঃসন্দেহে গর্বের বিষয়। কাতার সরকার ড. হাবিবুর রহমানের কাজের স্বীকৃতি দিয়েছে নানাভাবে।
এই যখন বাংলাদেশিদের অবস্থান তখন সেখানে বাংলাদেশিরাই নতুন সংকট তৈরি করছেন। বাংলাদেশ থেকে মাদক এনে বিমানবন্দরে ধরা পড়ছেন। এই মুহূর্তে ১৫২ জন বাংলাদেশি মাদক কারবারের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে কারাগারে রয়েছেন। এ ছাড়া কাতারের তিনটি কারাগারে নানা অপরাধে জেলে রয়েছেন ২৩২ জন বাংলাদেশি। অতি সম্প্রতি কয়েক কেজি গাঁজাসহ দুই বাংলাদেশি ধরা পড়ার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। চেক জালিয়াতি, ভিসা জালিয়াতি, অপহরণ, সদর রাস্তায় ডাকাতির সঙ্গে বাংলাদেশিরা জড়িত রয়েছেন- এটা অনেকটা গা-সওয়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু মাদক ব্যবসার সঙ্গে বাংলাদেশিরা জড়িয়ে পড়ায় এখানকার দূতাবাসও অনেকটা বিব্রত।
রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমেদ এই প্রতিনিধিকে বলেন, জনশক্তি রপ্তানিতে কাতার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রেমিটেন্সের দিক থেকেও আমরা উপরে। লোকসংখ্যাও আসছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, মাদক বিষয়ক অপরাধে জড়িয়ে যাওয়ায় ভাবমূর্তির একটা সংকট তৈরি হচ্ছে। ঢাকা থেকে যখন তারা আসছে তাদের কাছে পাওয়া যাচ্ছে গাঁজা, ইয়াবা, আফিমসহ নানা ধরনের মাদক। রাষ্ট্রদূত বলেন, এখানে আট লাখ ভারতীয়, ছয় লাখ নেপালি ও বাংলাদেশের চার লাখ মানুষ রয়েছেন।
পরিসংখ্যানের দিক থেকে আমরা তৃতীয়। জেলে দেখা যায় বাংলাদেশিরা ফার্স্ট। আমরা যে কথাটা শুনি, বাংলাদেশিরা বলে থাকেন, ‘তাদেরকে ফাঁসানো হয়েছে। ঢাকার এয়ারপোর্টে ধরা পড়ে না, এখানে এসে ধরা পড়ে।’ তার মতে ঢাকা বিমানবন্দরে নজরদারি জরুরি। তা না হলে এই সংকট বাংলাদেশকে এক কঠিন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে।
বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতা ইঞ্জিনিয়ার আনোয়ার হোসেন আকন্দ বলেন, এমনিতে শ্রমবাজার সংকটের মধ্যে রয়েছে। আমরা যদি আমাদের ভালোটা না বুঝি তাহলে বিপদ আসতে পারে যে কোনো সময়। কমিউনিটির পক্ষ থেকে আমরা সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করছি অপরাধের মাত্রা কমাতে। তিনি বলেন, মাদক কীভাবে এদেশে আসছে তা দেখতে হবে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কমিউনিটির তরফ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে কাউন্সেলিং অন্যতম।
বাংলাদেশ থেকে আসা মহিলারাও নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন। এর মধ্যে পাঁচজন মহিলার সাজা হয়েছে বিভিন্ন অপরাধে। শিল্পী আক্তার নামের এক মহিলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে। অপহরণ, চুরি ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়ায় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে অন্যদের।
ওদিকে প্রতিযোগিতা দিয়ে যেন অপরাধ বাড়ছে। অপরাধের তালিকায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও মাদারীপুর জেলার লোকজন শীর্ষে। এই দুই জেলা থেকে আগতদের সম্পর্কে এখানকার পুলিশও বেশ সতর্ক। ইতিমধ্যেই ‘ব্রাহ্মণ’ আর ‘মাদার’ এই দু’টি নাম তাদের কাছে বেশ পরিচিত।
বিশেষ দ্রষ্টব্য, জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ হয়নি, তবে সংখ্যা কমেছে। দক্ষ জনশক্তির চাহিদা রয়েছে দেশটিতে। বাংলাদেশ ইচ্ছা করলে এই সুযোগ নিতে পারে। মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা কাতারে অনেকখানি।