আমি সর্বদা জুলুমের বিপক্ষে, মাজলুমের পক্ষে আছি এবং থাকবো: মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী

কোটা সংস্কারের দাবিতে শত ছাত্রদের শহীদের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দলোন সফল ভাবে শেষ হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় গড়ে উঠা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত সোমবার পদত্যাগে বাধ্য হন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পরদিন মঙ্গলবার মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. সাহাব উদ্দিন জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দেন। এরই প্রেক্ষিতে বুধবার (৭ আগস্ট, ২০২৪) বিকালে প্রতিক্রিয়া জানতে গত নির্বাচনে জকিগঞ্জ-কানাইঘাট থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত এমপি মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী ফুলতলী’র নিকট হাজির হন সাংবাদিক জুবায়ের আহমদ।

‘সংসদ ভেঙ্গে যাওয়াতে আপনার প্রতিক্রিয়া কি’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এজন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করি যে, আমার উপর থেকে একটি বিরাট চাপ সরে গেল। আমার কাছাকাছি যারা থাকেন তারা জানেন, আমি বারবার বলেছি এই সংসদটা কোনোভাবে ভেঙ্গে গেলে আমি প্রাণে বাঁচি। কারণ, আমি নিজ আগ্রহে নির্বাচনে আসিনি বরং আমাকে আসতে বাধ্য করা হয়েছে। আমি একথা শুধু আজ বলছি না বরং বহুবার বলেছি। পূর্বের একাধিক নির্বাচনেও আমাকে চাপ দেওয়া হয়েছিল কিন্তু আমি আসিনি। এমনকি মন্ত্রিত্বের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তা গ্রহণ করিনি। সর্বশেষ ইসলাম ও ইসলামী শিক্ষাসহ দেশের শিক্ষাব্যবস্থার দুর্দশার সময়ে জাতীয় কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে বার বার চাপের কারণে আমি আসতে বাধ্য হয়েছিলাম এবং স্বকীয়তা রক্ষার স্বার্থেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলাম।

‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেকে বলছেন গত নির্বাচনে আপনার অংশগ্রহণটা ভুল ছিল, এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কি?’ প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমারও মনে হচ্ছে গত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাটা সঠিক হয়নি। আর আমিতো আগেই বলেছি আমি নিজ আগ্রহ থেকে নির্বাচনে আসিনি।

‘কেউ কেউ বলছেন, গত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আপনি জালিমের সহযোগিতা করেছেন এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাকে যারা চিনেন বা জানেন তাদের জানা আছে, আমি সবসময় জুলুমের বিপক্ষে, অন্যায়ের বিপক্ষে কথা বলি। কখনো কোনো জুলুমের পক্ষে কথা বলেছি এমনটা কেউ বলতে পারবেন না। আমি মাত্র কয়েক মাস এমপি ছিলাম। এই সময়ে যখনই সুযোগ পেয়েছি সংসদে ইসলামের কথা বলেছি, ইসলামী শিক্ষার কথা, কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের কথা বলেছি, দেশের উন্নয়ন ও আমার নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নের কথা বলেছি। স্থানীয়ভাবে আমার নিজ এলাকা জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের রাস্তাঘাট, মসজিদ-মাদরাসার উন্নয়নে আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। থানা বা প্রশাসনে মানুষ যাতে অহেতুক হয়রানির শিকার না হয় তার জন্য উভয় উপজেলায় কঠোর নির্দেশনা দিয়েছি এবং সবসময় তা তদারকি করেছি। কোনো উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমি কোনো এলাকা, মসলক, সংগঠন বা পক্ষ-বিপক্ষ বাছ-বিছার করিনি। দলমত নির্বিশেষে সকল মানুষের কল্যাণের চেষ্টা করেছি এবং সকলের ভালোবাসা ও সহযোগিতা পেয়েছি। সুতরাং আমার প্রতি জুলুমের অপবাদ দেওয়া উচিত নয়। আমি সর্বদা জুলুমের বিপক্ষে, মাজলুমের পক্ষে আছি এবং থাকবো ইন শা আল্লাহ।

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আপনার নিরবতা নিয়ে অনেকে সমালোচনা করছেন এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কখনো কোনো ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনের বিপক্ষে নই। ছাত্রদের এ আন্দোলনেরও বিপক্ষে ছিলাম না। এ আন্দোলনের প্রতি আমার নৈতিক সমর্থন শুরু থেকেই ছিল। ফুলতলী মাদরাসার আশুরার মাহফিলে আমি ছাত্রদের যৌক্তিক দাবির পক্ষে কথা বলেছি। উপস্থিত হাজারো ছাত্র এর সাক্ষী আছে। সম্ভবত ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার এর সংবাদ পত্র-পত্রিকায় যায়নি। আমাদের সংগঠন আনজুমানে আল ইসলাহ ও তালামীযে ইসলামিয়ার নেতাকর্মীরা এর পক্ষে কথা বলেছেন। শুরু থেকে তালামীযে ইসলামিয়া এ আন্দোলনে শরীক আছে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তালামীযের কর্মীরা আন্দোলনে সক্রিয় থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ মর্মে আমার নির্দেশনায়ও কার্পণ্য ছিল না। আন্দোলনের সময় আমি আমার এলাকায় পুলিশকে সর্বোচ্চ ধৈর্যধারণ করে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার নির্দেশনাও দিয়েছি।

‘এখন এই অবসরে আপনি কি করবেন?’ এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমি কখনো অবসর নই। আগেও ছিলাম না, এখনও নই। আমার বহু দায়িত্ব আছে। তাছাড়া খেদমতে খালক তথা মানুষের সেবা আমাদের সিলসিলার ঐতিহ্য, পরিবারের ঐতিহ্য। আমার বাবা সারাজীবন এতীম, অনাথ, বিধবা, অসহায়, আর্তপীড়িত মানুষের খেদমত করেছেন। আমাদের বড় ভাই ছাহেবের মাধ্যমে এই খেদমত সর্বদা জারি আছে। এ খেদমতেও আমি নিজেকে জড়িত রাখার চেষ্টা করি এবং আজীবন এ খেদমত করে যাবো, ইন শা আল্লাহ।

‘বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনার পরামর্শ বা বক্তব্য কি?’ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা দেশে শান্তি ও শৃঙ্খলা চাই। কোনো বিশৃঙ্খলা বা ভেদাভেদ চাই না। কোনো ভুল বোঝাবুঝি বা ভেদাভেদ যেন আমাদের সমাজের ঐক্য ও সম্প্রীতি বিনষ্ট না করে। আমি সকলের প্রতি দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ও সম্পদ রক্ষার আহবান জানাই। অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতিও আমি সমর্থন ও শুভেচ্ছা জানাই। আশা করি এ সরকার দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। আমি ছাত্র আন্দোলনে শহীদ সকলের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং সংশ্লিষ্ট সকল পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের পাশাপাশি সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই। সর্বোপরি আল্লাহর নিকট কামনা করি যেন এ দেশ শান্তিময় হয়।

 

আরও সংবাদ